বছর চারেক আগে হলোলেন্স এনেছিল মাইক্রোসফট। তবে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সেভাবে হলোলেন্সভিত্তিক কোনো পণ্য না থাকায় অনেকেই এর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন করে হলোলেন্সকে আবারো আলোচনায় নিয়ে এসেছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা।
আরো কিছু গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মতো টয়োটাও মনে করে গাড়ির ডিজাইন থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই বড় পরিবর্তন আনতে পারে অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট। এসব হেডসেটের মাধ্যমে থ্রিডি ছবিকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে পুরো বিষয়টিকে আরো সহজ করে দেয়।
বর্তমানে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড হলোলেন্স ব্যবহার করছে। এছাড়া ডেইমলার জানিয়েছে, কর্মীদের গাড়ির থ্রিডি মডেল ও ব্রেক সিস্টেমের মতো অন্যান্য অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ হলোলেন্স কিনেছে।
তবে হলোলেন্সের বাজার কিন্তু এখনো সেভাবে বাড়েনি। ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এবিআই রিসার্চ জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ২০ লাখের বেশি অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট এবং গ্লাস বিক্রি হতে পারে। এছাড়া ২০২৩ সালের মধ্যে এর পরিমাণ ২৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
টয়োটায় ফেরা যাক। সম্প্রতি জাপানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে কায়ানো নামের এক প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেখিয়েছেন কীভাবে গাড়ির গায়ে রঙ করার পর রঙের পুরুত্ব নিরূপণ করতে হলোলেন্স ব্যবহার করা যায়।
সাধারণত এ কাজটি করতে দুজন কর্মীর একদিন সময়ের প্রয়োজন হতো। তবে হলোলেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে এ কাজের প্রয়োজনীয় সময় চার ঘণ্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আর দুজনের স্থলে একজনই কাজটি সেরে নিতে পারছেন।
কায়ানো এবং তার দল একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন, যা কাগজের প্যাটার্ন ছাড়াই শুধু হলোলেন্সের মাধ্যমে থ্রিডি প্যাটার্নকে গাড়ির রূপ দিতে পারে।
কারখানায় নতুন কোনো যন্ত্র স্থাপনের আগে হলোলেন্সের মাধ্যমে সুবিধাজনক স্থান নির্বাচনের জন্যও মাইক্রোসফটের হলোলেন্স ব্যবহার করছে টয়োটা।
তবে হলোলেন্সের ব্যবহার না বাড়ার পেছনেও কিছু কারণ আছে। এটি বেশ ব্যয়বহুল। প্রতিটি হেডসেটের দাম ৩ হাজার ডলার। তবে এন্টারপ্রাইজ সংস্করণের দাম ৫ হাজার ডলার। এছাড়া গত দুই বছরে এর হার্ডওয়্যারে কোনো আপডেট আসেনি। হেডসেটটি কিছুটা ভারী, ওজন প্রায় ১ দশমিক ৩ পাউন্ড। ফলে দীর্ঘ সময় এটি পরিধান করে কাজ করা বেশ কঠিন। তাছাড়া টানা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাটারি লাইফ দুই থেকে তিন ঘণ্টার মতো।
বর্তমানে মাইক্রোসফটের হলোলেন্স ছাড়াও ম্যাজিক লিপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ম্যাজিক লিপ ওয়ান হেডসেট রয়েছে। এর বাইরে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস বাজারে রয়েছে।
তবে খরচ বিবেচনায় এখনো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট ও গ্লাস ব্যবহারের দিক থেকে পিছিয়ে আছে।
টয়োটা এখনো পরীক্ষামূলকভাবে হলোলেন্সের ব্যবহার চালাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি নির্মাণে অগমেন্টেড রিয়েলিটির ব্যবহার শুরু হলে হয়তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হবে।