ঘন কুয়াশা ও হিমেল ঠান্ডা হাওয়ায় টানা নয়দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহে সিরাজগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা রয়েছে পুরো সিরাজগঞ্জ। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষগুলোর দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে কয়েকগুণ। পাশাপাশি শীতবস্ত্রের সংকটে কষ্টে দিনাতিপাত করছে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্ররা। বিকাল থেকে ভোর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে পুরো এলাকা। দুপুরে কুয়াশার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা করে সূর্য।
তীব্র শীত ও হিমেল ঠান্ডা হাওয়ার কারণে মানুষের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পরেছে গবাদিপশুও। এ পর্যন্ত জেলায় বিভিন্ন ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামারে বেশ কিছু মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কারণে আলু খেত ও বোরো ধানের বীজতলায় লেট ব্লাইট রোগের প্রার্দুভাবের কারণে শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। নিম্ন আয়ের মানুষের দেখা দিয়েছে গরম কাপড়ের সংকট।
এদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
আজ শুক্রবার সকালে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন দেখা গেছে পুরো শহর জুড়ে। ৫০-৬০ মিটার দূরত্বের জিনিসও দেখা যাচ্ছিলো না। ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সাথে বৃষ্টি পরে। দুপুরে এক ঝলক রোদের আলো চোখে পড়লেও কুয়াশা একেবারে ছাড়েনি। দুপুর গড়িয়ে পড়লে আবারও ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলার সবস্থানে। গত নয়দিন ধরেই এমন অবস্থা চলছে।
সলঙ্গার রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন, উজ্জল, ছানোয়ার হোসেন বলেন, শীতের কারণে গত দুইদিন যাবৎ রিকশা নিয়ে কাজে বেরোতে পারিনি। টানাটানির সংসার তাই বাধ্য হয়ে আজ দুপুরে কাজে বের হয়েছি। কিন্তু লোকজন খুব কম বেরিয়েছি তার পরেও শুক্রবার। এ কারণে যাত্রীর দেখা মিলছে না।
সিরাজগঞ্জ শহরের সবজি বিক্রেতা মুজিবুর রহমান, মেহেদী হাসান ও আব্দুল মালেক বলেন, ভোরে সবজি নিয়ে বাজারে এসেছি গ্রাহকের পরিমাণ খুবই কম। শীতের দাপটে মানুষ ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। এ কারণে কেনাবেচাও অনেক কম হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সবজি নিয়ে বসে আছি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চল অধ্যুষিত কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু বলেন, প্রচন্ড শীতে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হতদরিদ্র নদী ভাঙনকবলিত মানুষগুলোর শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান সরকার বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ২৫০শ কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার চেয়ে একেবারেই নগন্য। স্থানীয় এমপি ৭০ পিস ও আমি নিজস্ব ভাবে ১শ পিস কম্বল বিতরণ করেছি ঘুড়কা ইউনিয়নের দুস্থ্যদের মাঝে। এখনও আমার ইউনিয়নের অনেক দুস্থ ও অসহায় মানুষ রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামারীদের কুয়াশা ও তীব্র শীত থেকে রেহাই পেতে খামারিদের মুরগি রাখার স্থানে চারদিকে পর্দা দিয়ে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রমেশ চন্দ্র বলেন, কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকোপে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানায়িছেন এ কর্মকর্তা।
সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীতের কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া রোগীরে প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এসব রোগে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন নিউমোনিয়া ও ফুসফুসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও দিন দিন ডায়রিয়া ও আমাশয়জনিত রোগীর সংখ্যায় বেড়েছে বলে জানান ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার পিস কম্বল পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত নয়টি উপজেলায় শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় সরকারী ভাবে ৫৪ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, শীতে বিপর্যস্ত হতদরিদ্র মানুষগুলোর জন্য কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সরকারী ভাবে ৫৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার কম্বলের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগেও কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





