টানাটানির মধ্যে মুনাফা বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

টানাটানির মধ্যে মুনাফা বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ জানুয়ারি, ২০২০

শেয়ারবাজারের জন্য মূল্য সংবেদনশীল বিবেচনায় তালিকাভুক্ত ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকাশের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ব্যাংকগুলো বিএসইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য দেওয়ার পর স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে এ তথ্য দিতে বেশ সময় লেগে যায়। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সংকটের মধ্যেও ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি গেছে। তারল্য সংকট থেকে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের ঋণ দিতে পারেনি ঠিকমতো। টাকার পাশাপাশি ডলারের সংকট ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে। সংকট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৭-১৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক মালিকরা প্রতিশ্রুতি দিলেও কমেনি সুদের হার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সেটিও আমলে নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ঋণ ও আমানতের নতুন সুদ হার কার্যকর হবে আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে। 

ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৪৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এটি ছিল এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা দাড়িয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ছিল ৫২৫ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা ২০১৮ সালে ছিল ২০৩ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০১৯ সালে ২৬২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর ছিল ২০৩ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৫৩ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৭৫ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ২০১৯ সালে ৭৩০ কোটি টাকা, আগের বছর ২০১৮ সালে ছিল ৬২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মেঘনা ব্যাংকের ৯৩ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০১৯ সালে মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি, ২০১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ৬৬৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এক্সিম ব্যাংক ৭১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২০১৯ সালে মুনাফা হয়েছে ৭৫৩ কোটি টাকা, আগের বছর ২০১৮ সালে তা ছিল ৬৭৩ কোটি টাকা, আল আরাফাহ ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ৮০১ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৬৪০ কোটি টাকা। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ২০১৮ সালে মুনাফা করে ৭৮০ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা বেড়ে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল এক হাজার কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালে হয়েছে ৯৪৮ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা।

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের নীতি সহায়তা নিয়েছেন ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর) হার। সব তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে গত মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। সেটিও বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।  

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করছে। সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি। অনেক ব্যাংক তার মূলধনও খেয়ে ফেলেছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও উন্নতি নেই। ফলে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাংকিং খাতের জন্য কমিশন ঘটনের প্রস্তাব এসেছে।

পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার হিসাব হয়। নিট মুনাফার ওপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে এসব ব্যাংকের মুনাফা নিয়ে শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্টদের আগ্রহ বেশি থাকে। নিট মুনাফার হিসাব এখনো না পাওয়া গেলেও করপোরেট কর কমায় এবার ব্যাংকগুলোর আগের চেয়ে কম কর পরিশোধ করা লাগবে। যা মুনাফার জন্য ইতিবাচক।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস ঋণের বিপরীতে সুদ এবং বিভিন্ন কমিশন ও চার্জ। এছাড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকেও আয়ের একটি অংশ আসে। আমদানি ও রপ্তানির বাইরেও বিভিন্ন কমিশন ও চার্জ থেকে ব্যাংকগুলোর আয় এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেওয়া ঋণ থেকে প্রতি মাসেই আয়ের বড় একটি অংশ পাচ্ছে ব্যাংক। সব মিলিয়ে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। অবশ্য ব্যাংক খাতে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ না থাকলে মুনাফা আরো ভালো হতো বলে ব্যাংকাররা মনে করেন। আর এজন্য খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads