সোনালী আঁশের সুদিন টাঙ্গাইলে আবার ফিরে এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ি পাট চাষে লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়েছে। যথা সময়ে খাল, বিল ও ডোবায় পানি আসায় পাট জাগ দিতেও কোন সমস্যা হয়নি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ দামে পাট বিক্রি করতে পেরে কৃষকে মুখে হাসি ফুটেছে। বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেয়া, ধোয়া ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে পাটের বীজসহ কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ১৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিলো। এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১৫ হাজার ৮৮ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৩ বেল্ট। সেখানে চলতি মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৮ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ২০৪ হেক্টর, মধুপুরে ২০৬ হেক্টর, গোপালপুরে ২ হাজার ২১০ হেক্টর, ভ‚ঞাপুরে ৪ হাজার ১২৯ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯৬০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৪৩৪ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৩৮৩ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৪৫ হেক্টর ও সখীপুরে ৪৩৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।
সরেজমিন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ পাট কাটছে, কেউ পাট জাগ দিচ্ছে, আবার কেউ পাট ধুয়ে শুকাতে সময় পার করছে। এসব কাজে বাড়ির মহিলার সহযোগিতা করছে। এদের মধ্যে অনেকেই পাট হাটে নিয়ে বিক্রি করছে। কারও কারও বাড়িতে পাইকাররা এসে পাট কিনে নিচ্ছে।
পাট চাষীরা জানায়, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি চাষ করতে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় মন পাট হয়। প্রতি মন পাটের বর্তমান মূল্য সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। অপর দিকে প্রতি বিঘায় চার থেকে সাড়ে চারশ আটি পাট খড়ি হয়। প্রত্যেক আটি পাট খড়ির দাম আট থেকে নয় টাকা। এতে কৃষকরা অন্যান্য ফললের চেয়ে পাটে লাভ বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকা ও বন্যা দেরীতে হওয়ায় ও বৃষ্টিপাত তুলনার চেয়ে কম হওয়ায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রাঙ্গাচিরা গ্রামের পাট চাষী আব্দুল হামিদ বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ইরি ধান কেটেই ওই জমিতে পাটের বীজ ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। হাল চাষ না করলেও আমার পৌনে তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেরীতে বন্যা হওয়া, তুলনার চেয়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন খুবই ভাল হয়েছে। সব মিলে আমার ২০ মনের মতো পাট হয়েছে। গত বছর ২২ শ টাকা মন পাট বিক্রি করলেও গত সপ্তাহে আমি ৩২ শ টাকা মনে ১০ মন পাট বিক্রি করছি। বাকি ১০ মন বুধবার বাড়িতে পাইকার এসে ৩৮ শ টাকা মন দাম বলে গেছে তাও বিক্রি করিনি। আমি সাড়ে চার হাজার টাকা মন দাম চেয়েছি। পাটের দাম আরও বাড়বে। এই জমিতে অন্য ফসল চাষ করলে এতো টাকা পেতাম না।
অলোয়া ভবানী এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এতে আমার সাড়ে ৬ মন পাট হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পাট বিক্রি করছি। এক বিঘা জমির চারশ আটি পাট কাঠি হয়েছে। পাইকাররা এসে ৮ টাকা আটি দাম বলেছে। তাও আমি বিক্রি করিনি।
একই এলাকার সমেজ মিয়া বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভাল ফলন হয়েছে। নিজে শ্রম দেওয়ায় শ্রমিক খরচ তেমন লাগেনি। এ বছরের মতো পাটের দাম আমার বয়সেও পাইনি। পাটের ফলন বাম্পার, দামও বাম্পার সব মিলে আমি অনেক খুশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে বিশেষ গুরত্ব দিয়ে বিএডিসি এবং বেসরকারি বীজ বিক্রেতা সাথে কথা বলে কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোকাল জাতের চেয়ে উপসী জাতের পাট এবার বেশি চাষ করা হয়েছে। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলনও অনেক ভাল হয়েছে।