টাঙ্গাইলে কৃষকের স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে কৃষকের স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ

  • টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৫ মে, ২০১৯

টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্ত জোড়া কাঁচা-পাঁকা ধান আর ধান, কৃষকের স্বপ্ন কেবল কেটে ঘরে তোলার। কিন্তু সে স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছে সর্বনাশা ব্লাস্ট রোগ।

ধানের সবুজ বর্ণ পেঁকে সোনালী হওয়ার পরিবর্তে ফিঁকে হয়ে ক্ষেতের ধান কালচে সোনালী বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে কৃষকের হাসি-স্বপ্নও এখন ফিঁকে হয়ে গেছে। জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে মোট ১৩৫ হেক্টর জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে বলে ধারনা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।

ব্লাস্ট রোগাক্রান্ত হয়ে অকালেই কালচে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে জমির ধান। ধানের শীষে কোনো ধান নেই। আছে চিটা। ধান কেটে গরু-মহিষের খাবার করছেন চাষীরা। পরিশ্রমের ফসলের ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার এক লাখ ৭০ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর, বাসাইলে ১১ হাজার ৯০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১৮ হাজার ৪০২ হেক্টর, ঘাটাইল উপজেলায় ২০ হাজার ৬৫০ হেক্টর, নাগরপুরে ১৬ হাজার ৮৫ হেক্টর, মির্জাপুরে ২০ হাজার ৪৮০ হেক্টর, মধুপুরে ১২ হাজার ৪৫০ হেক্টর, ভূঞাপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮১০ হেক্টর, গোপালপুরে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, সখীপুরে ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর, দেলদুয়ারে ৯ হাজার ৫২১ হেক্টর ও ধনবাড়ী উপজেলায় ১০ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

এবার বোরো’র মাঠ পর্যালোচনা করে কৃষি কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, জেলায় বোরো’র বাম্পার ফলন হবে। কৃষকরাও সে লক্ষে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, তাই ব্লাস্টের আক্রমণ বাম্পার ফলনকে ম্লান করে দিচ্ছে।

জানা যায়, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, কৃষি অফিস থেকে সরবরাহকৃত (বীজ) ব্রি-৫৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ বেশি। কৃষকদের মতে, রোপণের কিছুদিন পরেই কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিস এ রোগে আক্রান্ত এলাকায় ব্যাপক প্রচারণাসহ কৃষকদের নানা পরামর্শ দেন। কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধান, পরামর্শ ও বিভিন্ন রকম কীটনাশক ব্যবহার করে সে সময় ব্লাস্ট রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু ধান পাকার সময় আবার ব্লাস্ট ফিরে আসে, আর মাঠের পর মাঠ আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এ রোগ যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ইরি- বোরো উৎপাদনে লক্ষমাত্রা অর্জন করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

কৃষকের চোখের সামনে ক্ষেতের সোনাগুলো ধীরে ধীরে পুড়ে যাচ্ছে- এ দৃশ্য একজন কৃষকের কাছে বড়ই নির্মম। কালিহাতী উপজেলার বিলবর্ণী গ্রামের কৃষক মিণ্টু মিয়া ৮ বিঘা জমির এক বিঘায় ব্রি-২৮ চাষ করেছিলেন, সব ধান ব্লাস্টে পুড়ে গেছে। একই এলাকার নজরুল ইসলামের এক বিঘার একই অবস্থা। তারা অভিযোগ করেন, রোপণের সময় কৃষি অফিসের লোকজন দেখা-সাক্ষাত করেছে, ব্লাস্ট আক্রমণ করার পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

একই উপজেলার পালিমা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি কৃষি অফিসের সিআইজি গ্রুপের সদস্য। তিনি কৃষি অফিসে ট্রেনিং নিয়ে তাদের দেওয়া ব্রি-৫৮ ও ব্রি-৮১ জাতের বীজ ৬০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ায় কৃষি অফিসের স্থানীয় কর্মকর্তা ‘ব্লাস্টিন’ নামক ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধ নিয়মানুয়ায়ী ব্যবহার করেও কোন সুফল তিনি পাননি। প্রায় একই অভিযোগ করেন, ওই এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ, আলহাজ আ. করিম প্রমুখ। 

সখীপুর উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন, আবুল কাশেম, মজিদ ও কাইয়ুম আলীসহ অনেকেই জানান, কৃষি বিভাগের দেয়া পরামর্শ মোতাবেক ধান ক্ষেতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বিঘায় বিঘায় জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সাধারণত ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। প্রথম দিকে রোগের প্রকোপ কিছুটা কমলেও পরে আবারও আক্রমণের শিকার হন চাষিরা। কীটনাশকেও কোন সুফল পাননি কৃষকরা।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, কিছু কিছু এলাকায় শুধুমাত্র ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। এতে ভয়ের কিছু নেই, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে লক্ষমাত্রা পূরণে কোন সমস্যা হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads