ধর্ম

জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদ

  • প্রকাশিত ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

 

মহান আল্লাহতায়ালা যেসব দিনকে বিশেষভাবে বরকতময় ও মর্যাদাবান করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো জুমার দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য অলৌকিক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। পুণ্যময় এই দিনটি মুমিনের জন্য সওয়াব বৃদ্ধি, গুনাহ মোচন ও দয়াময় স্রষ্টার নৈকট্য লাভের বিশেষ মুহূর্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিন সকল দিনের সরদার। আল্লাহতায়ালা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনে তাঁকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এই দিনে আল্লাহতায়ালা তাঁকে মৃত্যুদান করেছেন এবং কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে (ইবনে মাজাহ)। জুমার দিন প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন (ইবনে মাজাহ)। জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ আদায় করা ও খুতবা শ্রবণ করা। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে জুমার নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) গমন কর এবং ক্রয়-বিক্রয় (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে (সুরা জুমা, আয়াত-৯)।

 

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিন ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে যান। প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে; এভাবে মসজিদে আগমনকারীদের নাম লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর যে ব্যক্তি অতি প্রত্যুষে মসজিদে গমন করে, সে একটি উট সদকা করার সওয়াব লাভ করে। তারপর আগমনকারী গাভি, তারপর আগমনকারী দুম্বা, তারপর আগমনকারী মুরগি ও তারপর আগমনকারী ডিম সদকা করার সওয়াব লাভ করে। যখন ইমাম খুত্বা প্রদানের জন্য আসেন অর্থাৎ খুতবা শুরু করেন, তখন ফেরেশতাগণ খাতা বন্ধ করেন এবং খুত্বা শ্রবণে মশগুল হন (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আসে, খুব মনোযোগসহ খুত্বা শ্রবণ করে এবং খুত্বার সময় চুপ থাকে, তার এই জুমা থেকে বিগত জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিনদিনের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় (মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে, প্রত্যুষে মসজিদে যাবে, পায়ে হেঁটে যাবে; কোনো বাহনে আরোহণ করবে না, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসবে, মনোযোগসহ খুত্বা শ্রবণ করবে এবং খুত্বার সময় কোনো প্রকার কথা বা কাজকর্মে লিপ্ত হবে না, সে জুমার জন্য যত কদম হেঁটে আসবে, প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বছরের রোজা ও তাহাজ্জুদ নামাজ পালনের সওয়াব লাভ করবে (আবু দাউদ, তিরমিজি)। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিনের গোসল চুলের গোড়া থেকে পর্যন্ত গুনাহসমূহ বের করে দেয় (তাব্রানি)।

 

জুমার দিনে এমন বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, ওই সময় যদি কোনো মুসলমান বান্দা অশ্রুসিক্ত নয়নে মহান স্রষ্টার দরবারে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, দয়াময় আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না; যদি সে হারাম জিনিস কামনা না করে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিনে এমন এক মুহূর্ত রয়েছে, কোনো বান্দা যদি ওই সময় আল্লাহর কাছে কিছু কামনা করে, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা কবুল করেন। আর সেই মুহূর্তটি হলো আসরের পর (মুসনাদে আহমদ)। মুসলিম শরিফের রেওয়ায়েতে আছে, খুত্বা শুরু হওয়ার পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়। জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলো, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। আর যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও নিরাপদ থাকবে (তাফসির ইবনে কাসির)। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, তার এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত সব (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছর নফল ইবাদত করার সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। দরুদ শরিফটি হলো : আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।

 

প্রিয় পাঠক! জুমার দিনের বিশেষ কিছু আমল ও আদব নিচে উপস্থাপন করা হলো। যথা-

১. গোসল করা, ২. মিসওয়াক করা, ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৪. যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা,  ৫. আগে মসজিদে আসা, ৬. সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা, ৭. ইমামের দিকে মুখ করে বসা, ৮. খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা, ৯. মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা এবং খুতবার সময় চুপ থাকা, ১০. দুই খুতবার মাঝখানে মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা; এক্ষেত্রে হাত উঠানো জরুরি নয়, ১১. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা, ১২. পরে মসজিদে এসে মুসল্লিদের ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া; এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা.) কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন।

 

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা

কাজলা (ভাঙ্গা প্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

helaluddinhabibi87@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads