মো. তাজুল ইসলাম
আমরা ছোট-বড় সকলে ‘মার্কেটিং’ শব্দটার সঙ্গে পরিচত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মার্কেটিং হলো একটি বিনিময় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সন্তুষ্টির সঙ্গে ভোক্তার প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ হয়। ১৯৫০-এর মাঝামাঝি সময়ে মার্কেটিং মতবাদের উদ্ভব হয়। পূর্বে ব্যবসার মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন থাকলেও এই মতবাদ উদ্ভবের পর এ ধারণায় আসে পরিবর্তন। এই মতবাদের প্রভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে স্থায়ী ক্রেতাতে রূপদানের প্রচেষ্টা চালায়।
১৭৬০ থেকে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে শিল্প বিপ্লব উৎপাদন ব্যবস্থায় আনে আমূল পরিবর্তন। শিল্প বিপ্লবের পূর্বে উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য নিজেরাই তৈরি করে নিত। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পর পুঁজিবাদের উদ্ভব, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার, কয়লা খনি আর ইস্পাতের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অনেক শিল্প শহর আর কারখানা গড়ে ওঠে। শুরু হয় বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন। বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন শুরু হলেও তারা শুধু মুনাফা অর্জনের দিকেই ফোকাস করত বেশি, ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনের দিকে তেমন ফোকাস ছিল না। বিক্রি বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধি ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রপাতি, উৎপাদন পদ্ধতি, শ্রমিকদের কৌশলে আসে পরিবর্তন। একই ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে থাকে কয়েকটি কোম্পানি। পণ্য মানুষের কাছে হয়ে পড়ে সহজলভ্য। একই পণ্যের কয়েকটি কোম্পানি থাকায় বাজারে তৈরি হয় প্রতিযোগিতা। কে কত ভালো পণ্য বাজারে এনে বাজার দখল করবে। আর এই প্রতিযোগিতা থেকে জন্ম হয় মার্কেটিং মতবাদের।
এখন শুধু পণ্য উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিলে পণ্য বিক্রি হবে না, পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু বাজার গবেষণার; পণ্যটি কতটুকু ভোক্তার চাহিদা পূরণে সক্ষম। আবার শুধু চাহিদা পূরণ করলেই চলবে না, সঙ্গে লাগবে ভোক্তার সন্তুষ্টি। যদি আজ আমরা মোবাইল সেট তৈরি কোম্পানিগুলোর দিকে খেয়াল করি তবে দেখব, কে কত ভালো ক্যামেরা, প্রসেসরের ফোন বাজারে আনতে পারছে। তাও আবার স্বল্পমূল্যে। আবার যদি টয়লেট সোপগুলোর দিকে তাকাই তবে দখো যাবে, কে কত ভালো সুগন্ধি এবং ত্বকের উপকারী সাবান বাজারে এনে বাজার দখল করতে পারবে, সেই প্রতিযোগিতাও কম নয়।
আপনি যতই ভালো পুঁজি, সুদক্ষ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ব্যবসায় নামেন না কেন, যদি আপনার মার্কেটিং পলিসি ভালো না হয়, তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব না। আজ বিশ্বের লিডিং ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, তাদের মার্কেটিং পলিসি দিয়ে ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হওয়ায় তারা বিশ্ব ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আজ প্রচুর উন্নত মানের পণ্যসামগ্রী আমরা হাতের নাগালে পাচ্ছি একমাত্র মার্কেটিং মতবাদের কারণে। কারণ মার্কেটিং মতবাদের মূল লক্ষ্য হলো ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ক্রেতাকে স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তর করা। এই মতবাদকে কেন্দ্র করেই আজ এত এত বাজার গবেষণা, উন্নত মানের চাহিদা পূরণে সক্ষম পণ্যের আবিষ্কার। এক কথায় বলা চলে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মার্কেটিংয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
taju.iu.mkt.99@gmail.com