ধর্ম

জিম্মিদের নিরাপত্তা রক্ষায় মহানবী (সা.)

  • প্রকাশিত ১ ডিসেম্বর, ২০২০

মুফতি গোলাম রাজ্জাক কাসেমী

 

 

 

ইসলামি রাষ্ট্রের ছায়াতলে যেসব অমুসলিম বাস করে, ইসলামি পরিভাষায় তাদের ‘জিম্মি’ বলা হয়। আধুনিক ব্যবস্থায় জন্মসূত্রে বা অন্য কোনো উপায়ে যখন সে নাগরিকত্ব লাভ করে তখনই সে জিম্মির অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ‘জিম্মি’র সব অধিকার লাভ করে। অর্থাৎ মানবাধিকার সংজ্ঞায় যেসব অধিকার রয়েছে তা মুসলিম ও জিম্মিরা সমভাবে ভোগ করবে। তাদের ওপর অন্যায় ও অবিচার করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোনো ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দেবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব।’ (আবু দাউদ হাদিস নং-৩০৫২) বিশেষত জিম্মিদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া, প্রতিবেশী হিসেবে আশ্রয় দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। অন্যায়ভাবে কোনো জিম্মিকে হত্যা করা মহাপাপ। এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত কোনো লোককে হত্যা করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (বুখারি হাদিস নং-৩১৬৬)

একযুদ্ধে হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) এক কাফেরকে পরাস্ত করে মাটিতে ফেলে দিলেন এবং তাকে হত্যা করার জন্য তলোয়ার উত্তোলন করলেন। এ অবস্থায় ওই ব্যক্তি কালেমা পাঠ করল। কিন্তু উসামা (রা.) ব্যক্তিটিকে হত্যা করলেন। ঘটনাটি জেনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘উসামা, লোকটি কলেমা পাঠ করার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে!’ হজরত উসামা (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! লোকটি তলোয়ারের ভয়ে কলেমা পাঠ করেছে (অর্থাৎ অন্তর থেকে নয় বরং মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য সে কলেমা পাঠ করেছে)।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তুমি কি তার অন্তর চিড়ে দেখেছিলে?’ (মুসলিম হাদিস নং-৯৬) তাই একজন ব্যক্তি যতক্ষণ নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়, ততক্ষণ তাকে মুসলমান বিবেচনা করেই তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে।

আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য ইসলামে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিধানও দেয়া হয়েছে এ কথা ঠিক, তবে এটাও অনস্বীকার্য যে, যুদ্ধের ময়দানের বাইরে তাদের নিরাপত্তা দান, তাদের সাথে সৌজন্য বজায় রেখে উত্তম আচরণের কথাও বলা হয়েছে। এমনকী যুদ্ধের মাঠেও যেন অমানবিক আচরণ করা না হয়। যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তাদেরকে বিশেষত নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর যেন হামলা করা না হয় এ আদেশও দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কাউকে কোনো সেনাদলের আমীর নিযুক্ত করতেন তখন তাকে বিদায়লগ্নে বলতেন, যুদ্ধ করো আল্লাহর নামে, আল্লাহর পথে। লড়াই করো তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করেছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাও, তবে গনীমাতের মালের খিয়ানত করবে না। চুক্তি ভঙ্গ করবে না। শত্রুপক্ষের অঙ্গ বিকৃতি করবে না। শিশুদেরকে হত্যা করবে না। যখন তুমি মুশরিক শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন তাকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহ্বান জানাবে। তারা এগুলোর মধ্য থেকে যেটিই গ্রহণ করে, তুমি তাদের পক্ষে তা মেনে   নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াবে। প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দেবে। যদি তারা তোমার এ আহ্বানে সাড়া দেয়, তবে তুমি তা মেনে নেবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে সরে দাঁড়াবে। আর যদি ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তবে ‘জিযয়াহ’ (ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ওপর ধার্যকৃত কর) প্রদানের দাবি জানাবে। যদি তারা তা গ্রহণ করে নেয়, তবে তুমি তা মেনে নেবে এবং যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। আর যদি তারা এ দাবি না মানে তবে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’ (মুসলিম হাদিস নং-১৭৩১)

 

লেখক : মুহাদ্দিস ও বিভাগীয় প্রধান (আরবি ভাষা), মাহমুদিয়া মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads