অনুকূল আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতে চলতি মৌসুমে জুড়ী উপজেলায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। জাম্বুরার চারা রোপণের ৫-৭ বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব। গাছের গড় আয়ু ৩০-৫০ বছর, ধারাবাহিকভাবে ফলনও পাওয়া যায় এ সময়।
জাম্বুরা চাষে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ পেয়েছেন অত্রাঞ্চলের চাষিরা। তাদের ভাগ্য খুলেছে, পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। তাদের উৎপাদিত জাম্বুরা মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিদেশে। কাস্টমস ও প্রবাসীদের মধ্য দিয়ে জুড়ীর জাম্বুরা এখন বিদেশেও যায় বলে জানালেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা। তবে বিদেশে পাঠানোর আগে ইনতাক্স রোগসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক রোগ পরীক্ষা করে রোগমুক্ত ফল হলে পাঠানো হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, জাম্বুরা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবু গোত্রের একটি ফল। গ্রামীণ জনপদের পাহাড়ি অঞ্চলের টিলায় এর ফলন ভালো হয়। জুড়ী উপজেলায় জাম্বুরার বাণিজ্যিক কোনো বাগান নেই। বেশিরভাগই বসতবাড়ি, স্কুল, কলেজের আশপাশে ও পতিত জায়গায় জাম্বুরা চাষ করা হচ্ছে। কোনো কোনো অঞ্চলে এটি বাতাবি লেবু নামেও পরিচিত। অন্যান্য ফলের তুলনায় যেমন দামে সস্তা, তেমন পুষ্টিতেও ভরপুর। টক-মিষ্টি এ ফলটি লবণ-মরিচ মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে ভীষণ ভালো লাগে। জাম্বুরা লেবু গোত্রের ফল হলেও স্বাদ অনেকটা আঙুরের মতো। জাম্বুরা ফল হিসেবে যেমন চমৎকার, তেমনই পুষ্টিও ব্যাপক। আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত ফলটি গাছে গাছে দুলতে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পাকে আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ টন ফলন উৎপাদন করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলার হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জামকান্দি, দুর্গাপুর, গোবিন্দপুর, বিনোদপুর, লালছড়া, রোপাছড়া, লাঠিটিলা, কুচাইরতল, কচুরগুল, কালাছড়া ও পুটিছড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের টিলাবাড়ি বা বসতবাড়ির আশপাশে ৬৫ হেক্টর জমিতে আছে প্রায় ১০ হাজার জাম্বুরা গাছ। চাষ করছেন ১৩০০ কৃষক। গাছপ্রতি ফলন ২০০-৫০০টি জাম্বুরা। এগুলো বেশিরভাগই স্থানীয় জাতের। অত্রাঞ্চলের চাষিরা অন্যান্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি জাম্বুরা চাষাবাদে আগ্রহ ও উৎসাহ দেখাচ্ছে।
হায়াছড়া গ্রামের ইব্রাহিম আলী, মঈন উদ্দিন, শুকনা গ্রামের জুবায়ের আহমদ, পুটিছড়া গ্রামের আবদুল খালিক, লালছড়া গ্রামের মোরশেদ ও রোপাছড়া গ্রামের বাবুল মিয়া জানান, স্থানীয় বাজারে জাম্বুরার উপযুক্ত দাম পাওয়া গেলে এতে আরো অনেকে আগ্রহী হতো। স্থানীয় বাজারে পাইকারি ১০-১২ টাকা দামে বিক্রি হয়। খুচরায় পাওয়া যায় ৩০-৪০ টাকায়। এতে চাষিদের চেয়ে বেশি লাভবান পাইকারি ক্রেতারা। তারা বলেন, জুড়ী বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চট্টগাম, সিলেট ও ভৈরবে বিক্রি করতে নিয়ে যাই। সেখানে জাম্বুরার ভালো চাহিদা রয়েছে এবং ভালো দামও পাওয়া যায়।
জুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ীর জাম্বুরার চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিদেশে। চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামীতে আরো ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।