জামালপুরে বিড়ম্বনার আরেক নাম ট্রেনের টিকিট

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

জামালপুরে বিড়ম্বনার আরেক নাম ট্রেনের টিকিট

  • আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর
  • প্রকাশিত ১৯ জুন, ২০১৯

জামালপুর রেলস্টেশনে টিকিট পাওয়া সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।একটি টিকিটের জন্য স্টেশনের কাউন্টারে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ালেও মিলে না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। আর টিকিট মিললেও পাওয়া যায় না সিট। বছরজুড়েই টিকেটের এ হাহাকার থাকে।

জামালপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী আন্তঃনগর ট্রেন আছে চারটি। সেগুলো হল- তিস্তা এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস আর অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস। এই ট্রেনগুলো প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে যাতায়াত করে। কিন্তু যেই পরিমাণ যাত্রী সেই পরিমাণ টিকিট  নেই। অন্যদিকে অনলাইনে ৫০% টিকিট বিক্রির ঘোষণায় বাকি টিকিট স্টেশন কাউন্টার এ বিক্রি করা হয়। কালোবাজরিদের দখলে চলে যায় বাকি ৫০% টিকিট।

কালোবাজারি রোধে প্রশসান বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আগের চেয়ে একটু কমিয়ে এনেছেন। টিকিট কালোবাজারি রোধে প্রশাসন যেদিন কোনো পদক্ষেপই নেন না সেদিন কালোবাজারিরা টিকিট সংগ্রহ করে। জামালপুরের কালোবাজারিদের হাত অনেক লম্বা। তারা জামালপুর বসেই তারাকান্দি, সরিষাবাড়ি, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ থেকে মার্জি মাফিক টিকিট সংগ্রহ করে থাকেন।

বুধবার দুপুরে সরজমিনে জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, শ’ শ’ নারী পুরুষ তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ঢাকাগামী কোনো ট্রেন স্টেশনে আসা মাত্রই বাধ্য হয়ে আসনবিহীন টিকেট নিয়েই তারা দাঁড়িয়েই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছেন।

চলতি বছরের ২ মে থেকে রেলওয়ে সেবা অ্যাপ এর মাধ্যমে মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। এর ফলে কাউন্টারে সকল ট্রেনের নির্ধারিত টিকেটের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। এ কারণে অনেক সাধারণ যাত্রীরা কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারছে না। তাছাড়া ট্রেনে চলাচলকারী ভিআইপি যাত্রীদের কোনো টিকেট সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ না থাকায় প্রতিদিনই স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে ভিআইপি যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জামালপুর রেল স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন বলেন, আগে ট্রেনের কিছু টিকেট ভিআইপি যাত্রীদের জন্য ব্লক করে রাখা যেত। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তেও ব্লক থেকে টিকেট ছাড়িয়ে ভিআইপি যাত্রীদের সহযোগিতা করা যেত। এখন সেই ব্লক সিস্টেম আর নেই। নির্ধারিত ট্রেনের টিকেট ট্রেন যাত্রার ১০ দিন আগেই বিক্রি হয়ে যায়। তাছাড়া রেল সেবা অ্যাপস এর মাধ্যমে মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ টিকেট অনলাইনে চলে যাওয়ায় কাউন্টারে টিকেটের চাপ আরো বেড়ে  গেছে।

আব্দুস সালাম নামের দয়াময়ী রোডের এক যাত্রী বলেন, রেল সেবা অ্যাবস এর মাধ্যমে বিক্রির জন্য রাখা ৫০ শতাংশ টিকেটের বেশীরভাগই কিছু অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে কালাবাজারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর তাই টিকেট কাউন্টারে টিকেটের এত সংকট দেখা দিয়েছে।

শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার ট্রেন যাত্রী কালাম মিয়া বলেন, কাউন্টারে কোনো টিকেট না পেয়ে আমি বাধ্য হয়ে ১৬০ টাকা মূল্যের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি শোভন টিকেট ৮০০ টাকা দিয়ে টিকেট কালোবাজারির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি।

জামালপুর রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ বলেন, অনলাইনে অর্ধেক ট্রেনের টিকেট চলে যাওয়ায় কাউন্টারে টিকেটের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে তাই যাত্রীরা কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু টিকেট ব্লক সিস্টেম না থাকায় আমার তাদেরকে  কোনোভাবেই টিকেট দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছি না।

পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ফজলুল হক আকন্দ বলেন, হঠাৎ জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়ার দরকার হলে আমরা কোনভাবেই কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারি না। তাই আমাদেরকেও বাধ্য হয়ে টিকেট কালোবাজারিদের কাছ  থেকে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহঙ্গীর সেলিম বলেন, যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ঢাকা-জামালপুর রেলপথে কমপক্ষে আরো দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন খুবই জরুরি। কারণ এ জেলা শহরে অনেক ভিআইপি ব্যক্তি রয়েছেন যাদের জন্য অবশ্যই ট্রেনের টিকেটের ব্লক সিস্টেম পুনরায় চালু করা দরকার। আশা করছি, রেল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads