চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যে আটজন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। গবেষণায় জালিয়াতি, অনৈতিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, ছাত্রসংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠায় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। এছাড়াও জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী, সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করায় তারা বঙ্গবন্ধু চেয়ারের বিরোধিতা করে আসছে।
আট সিন্ডিকেট সদস্যের উদ্বেগ জানানোর প্রেক্ষিতে আজ রোববার দুপুরে এক লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন। এসময় উদ্বেগ প্রকাশকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরেন উপাচার্য।
বক্তব্যে চবি উপাচার্য বলেন, গত ৭মার্চ বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না নেওয়ার শর্তে আমি এ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ বিষয়ে গুটিকয়েক সম্মানিত শিক্ষক গণমাধ্যমে নেতিবাচক,মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। তারা বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে আমার যোগদানকে মেনে নিতে পারছেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে প্রচলিত সবধরণের অনৈতিক কর্মকান্ড, সুযোগ-সুবিধা প্রদান আমি বন্ধ করে দিয়েছি। এ কারণেই আমার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষকসহ কুচক্রিমহল সক্রিয় রয়েছে।
শর্ত সাপেক্ষে 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার' পদে প্রণয়ন কমিটি আমাকে মনোনীত করে। আমাকে মনোনয়ন দেয়ার সুপারিশটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করে। এ সুপারিশের ভিত্তিতে ৭মার্চ আমি উক্ত চেয়ার পদে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ পদে যোগদান বিষয়টি পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশে উল্লিখিত বিধান অনুযায়ী রিপোর্ট করা হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে সিন্ডিকেট সদস্য ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী জানান, ওই পদে যোগদানের জন্য যেসব শর্ত প্রযোজ্য সেসব উনি পূরণ করেননি। আমাদের বিরুদ্ধে যেসমস্ত অভিযোগ দেখানো হচ্ছে তা মিথ্যা,বানোয়াট, ভিত্তিহীন। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে হলুদ দলের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যের ৩৩ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন বিবৃতি দিয়েছে। বাকি ২৫ জন বিবৃতির বিষয়ে জানেনই না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতিকে কোনোভাবেই আলাদা করা যাবে না। তিনি রাজনীতি করেছিলেন বলেই আজকের স্বাধীনতা। নিজেদের অন্যায়গুলোকে ধামাচাপা দিতে ভিসি পদ নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত বঙ্গবন্ধু চেয়ারের নীতিমালা পর্যালোচনা করে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর চবির ৫১০তম সিন্ডেকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধিষ্ঠ হন। তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু’বছর করার সুযোগ রয়েছে।
নির্দেশনা মোতাবেক কমিটি ২০১৮ সালের ৭ মে ও ৩ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তিন দফা বৈঠক করেন। সর্বশেষ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় নীতিমালা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। একইসাথে পদের জন্য উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করা করা হয়। কিন্তু সুপারিশকৃত ওই সভায় কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী।
গঠিত কমিটির তিনদফা প্রস্তাবনা ও কার্যক্রম ২৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ৫২০তম সভায় রিপার্ট আকারে তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না করে রিপোর্ট হিসেবে আনায় দুই সিন্ডিকেট সদস্য নোট অফ ডিসেন্ট দেন। পরবর্তীতে ৭ মার্চ উক্ত চেয়ারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন উপাচার্য।





