একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচারণায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকায় প্রার্থীরা যে যার মতো যতটুকু পারছেন সেভাবেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে গঠন করা নির্বাচনী সেল আজ পর্যন্ত একটি বৈঠকও করতে পারেনি। সোমবার মনিটরিং সেল সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেও তা পরে স্থগিত করা হয়। এদিকে দলটির বিভিন্ন আসনে দেওয়া উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ২৬টি আসনে লড়বে। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১৪৭টি আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছে। এসব আসনে উন্মুক্ত নির্বাচন করবে দলটি। তবে বেশ কয়েকটি আসনে দলটির উন্মুক্ত প্রার্থীরা মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। একই সঙ্গে আসনটিতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন রওশন। গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগের দিন সোমবার মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার আগে ঢাকা-১৩ আসনের মহাজোটের প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু সরে দাঁড়িয়েছেন।
এ ছাড়া ঢাকা-১৭ (গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন এরশাদ। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে আসবেন। তবে রংপুর-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
এদিকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও দলীয় প্রার্থীদের কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে গেছেন। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ রয়েছেন ময়মনসিংহে, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের রয়েছেন লালমনিরহাট এবং মহাসচিব মশিউর রজহমান রাঙ্গা তার নির্বাচনী এলাকায় রংপুরে রয়েছেন। আর দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী এবং সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দীর্ঘদিন পর ১২ ডিসেম্বর দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত থাকলেও এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তার। দলীয় এবং চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসছেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন তিনি। এ অবস্থায় কেন্দ্রে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা কোনোটাই পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। অথচ এই সময়ে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কেন্দ্রের পরামর্শ খুবই জরুরি ছিল বলে দলটির প্রার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থীদের কোনো দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়নি। উন্মুক্ত আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় প্রার্থীরা অনেকেই নানা রকম বাধার শিকার হচ্ছেন। তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, ক্যাম্পেইনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কোনো রকম পরামর্শ বা করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা সেল গঠন করা হয়েছে। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুমোদনক্রমে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে আহ্বায়ক এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপাকে সদস্যসচিব করে ২০ সদস্যের মনিটরিং সেলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এ কমিটিও কোনো কাজে আসেনি বলে মনে করেন দলটির প্রার্থীরা।
দিনাজপুর-৪ আসনের প্রার্থী সোলায়মান সামি বলেন, আমি এখনো কেন্দ্র থেকে কোনো গাইডলাইন পায়নি। এখানে বেশ ভালো অবস্থা রয়েছে। সহায়তা পেলে ভালো রেজাল্ট নিয়ে ফিরতে পারব।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমাদের দলের প্রার্থীরা ভোটের জন্য স্ব-স্ব এলাকায় অবস্থান করছেন। সবাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। আমিও আমার নিজের ভোট নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে নির্বাচনী দিকনির্দেশনা বিষয় আমাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে পার্টির চেয়ারম্যান দেশে ফিরে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।