জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং

ছবি : সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং

  • আসিফ খান
  • প্রকাশিত ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুইজারল্যান্ডে এমন একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে যা বাতাস থেকে সরাসরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে তা মাটিতে জমাচ্ছে বা সেই কার্বন ব্যবহার করে বানাচ্ছে সার। বিশাল গ্রিন হাউজে সেই সার চাষের কাজে লাগানো হচ্ছে অথবা মাটির নিচে জমা রাখা হচ্ছে।

এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় রাখতে পারবে বিশেষ ভূমিকা। তবে এসব প্রযুক্তির আছে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। আর আছে এটা নিয়ে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের ঝুঁকি। ফলে এই ধরনের প্রযুক্তি জলবায়ু গবেষকদের কপালের ভাঁজ পুরোপুরি সরাতে পারছে না।

এ ছাড়া গোটা বিশ্বেই এমন মডেল প্রয়োগ করা যাবে কি না তা নিয়েও আছে সংশয়। এ বিষয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ওশলিস মনে করেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অবশ্যই ভালো কাজ করে। কিন্তু  বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে এর আকার আরো কয়েকগুণ বড় হতে হবে। এ ছাড়া মাটির নিচে দীর্ঘকাল কার্বন-ডাই-অক্সাইড রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে। সে জন্যও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নয়ন করা দরকার।

আন্দ্রেয়াস ওশলিস বলেন, সবই ঠিক আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি সত্যি এমনটা চাই? সমাজে এর পক্ষে সমর্থন আদায় করা কি সম্ভব?

তার মতে, মাটির নিচে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রাখার বিষয়টির সঙ্গে কিছু ভয়ভীতি জড়িয়ে আছে। এর ফলে তীব্র ভূমিকম্প ঘটতে পারে অথবা ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হতে পারে। মোট কথা, তার পরিণতি সম্পর্কে আজ ধারণা করা কঠিন।

এ ছাড়া রাজনীতির মাঠে ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। আদৌ অথবা কীভাবে তা প্রয়োগ করা সম্ভব, সে বিষয়ে কোনো বিধিনিয়ম নেই। তবে কিছুই না করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা যে আরো বাড়তে থাকবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তখন দুই মেরু অঞ্চলে আরো বরফ গলে যাবে এবং মরুভূমি আরো সম্প্রসারিত হবে।

আন্দ্রেয়াস ওশলিস বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে চলেছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োগ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়। তার মতে, সব রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা ত্যাগ করতে হবে।

এ বিষয়ে জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগতভাবে এখনই বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া কাজে লাগানো সম্ভব।

যেমন, ১৯৯১ সালে ফিলিপাইনের পিনাটুবো আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার পর গন্ধকের যত কণা আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল, খাতা-কলমে ঠিক তত সংখ্যক কণা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পাঠানো সম্ভব। সে সময়ে গন্ধকের আস্তরণ সরতে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১ বছর সময় লেগেছিল।

এ বিষয়ে ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের উলরিকে নিমায়ার বলেন, পিনাটুবো পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে দিয়েছিল এবং বাতাসে গন্ধকের স্তর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আধ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়েছিল। ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটতে পারে। গন্ধকের পরিমাণ অনুযায়ী আমরা পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে পারব।

তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মনে এখনো সংশয় রয়েছে। কৃত্রিমভাবে জলবায়ুর ওপর হস্তক্ষেপ করলে অন্য বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু শক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারে। উলরিকে নিমায়ার বলেন, এই প্রযুক্তির রাজনৈতিক প্রয়োগ নিয়েই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। সবাই রাজি হবে এবং মেনে চলবে, এমন আন্তর্জাতিক বিধিনিয়ম স্থির করাও কঠিন। ব্যক্তিগতভাবে আমার আশঙ্কা হলো, কোনো এক সময় এর মাধ্যমে যুদ্ধ লেগে যাবে।

তিনি বলেন, হাতে সময় খুব কম। তা ছাড়া জলবায়ু প্রণালির ওপর এমন নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপ সত্যি সমাধান সূত্র হতে পারে কি না, তা কেউ বলতে পারে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads