জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ৫ মে, ২০১৯

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

 

জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্য সত্যিকার অর্থেই গর্ব করার মতো। তবে এতে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বর্তমান সরকারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের কারণে গত এক দশকে মানবতাবিরোধী নোংরা ভূত মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ না পেলেও সুযোগ পেলেই তারা যে থাবা বিস্তার করবে না তা ভাবার কারণ নেই। জঙ্গিদের সামর্থ্যকে খাটো করে দেখাও আহাম্মকের স্বর্গে বসবাস করার শামিল। শ্রীলঙ্কায় সে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে অসতর্ক মনোভাবের কারণে। আগাম তথ্য পাওয়া সত্ত্বেও সতর্ক থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি সে দেশের প্রশাসন; যার খেসারত দিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। হামলার ঘটনা শ্রীলঙ্কার ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্কে যেমন চিড় ধরিয়েছে, তেমনি সে দেশের পর্যটননির্ভর অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে।

জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য থাকলেও শ্রীলঙ্কার ঘটনা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ সৃষ্টি করেছে। নিউজিল্যান্ডের পর শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৩৬ দিনের মাথায়। পাল্টাপাল্টি আরো ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনো দেশে। বাংলাদেশও এ বিপদ থেকে মুক্ত নয়। দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার রোগে ভোগা মানসিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা নগণ্য হলেও তাদের খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। বরং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রভাব পরিমাপ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। শ্রীলঙ্কার পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগাম খবর পাওয়ার পরও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। দায়িত্ব পালনে শিথিলতা, কমিটমেন্টের অভাব ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সম্পর্কে হেলাফেলার মনোভাব মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গি সৃষ্টির সব উপাদানের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক প্রচারমাধ্যমগুলোয় যারা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদের প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থেই এ ব্যাপারে হতে হবে আপসহীন।

একাত্তরে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ’৭২-এর সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এ চারটি মূলনীতি প্রণয়ন করেন। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধান বারবার পরিবর্তন করা হয়। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা শুরু হয়। ধর্মীয় উগ্রতার বীজ এভাবেই রোপিত হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

জঙ্গিবাদ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। গত ছয় মাসে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, পাকিস্তান, ইরাক, আফগানিস্তান, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে বর্তমানে আলোচিত-সমালোচিত জঙ্গিগোষ্ঠী ‘আইএস’। বিশ্বব্যাপী আইএসের উত্থান বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কতটা হুমকি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ যখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এদেশের প্রবৃদ্ধি যখন বিগত কয়েক বছর যাবৎ ছয় শতাংশের ওপরে, সবশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সরকার আশা করছে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে— দেশের এই অগ্রযাত্রায় এ ধরনের জঙ্গি হামলা প্রতিবন্ধকতা বয়ে আনবে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা তারই নিদর্শন। সুতরাং আমাদের সাবধান হতে হবে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জঙ্গিবাদ দমনে ভারতসহ যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো জিম্মি সংকট নিরসনে অপারেশন পরিচালনায় যে সময় নিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা এবং সশস্ত্র বাহিনী সময় নিয়েছে অনেক কম। জঙ্গি দমনে এগুলোই আমাদের আশাবাদ। তাকে পুঁজি করে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।

 

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads