ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি

  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

 

আবু জাফর সিদ্দিকী

একটা সময়ে ছাত্ররাজনীতি মানে ছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে এবং সুযোগ-সুবিধা ও দাবি আদায়ের একটি ইতিবাচক প্ল্যাটফর্ম।  আগামী দিনের নেতৃত্ব বিকাশের সুস্থধারার রাজনীতি শেখার কৌশলও ছিল এ প্ল্যাটফর্ম। বর্তমান ছাত্ররাজনীতির কলাকৌশল দেখে মনে হয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের এটাই হাতেখড়ি। যা হোক, সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে, রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর এসে এ বছর অনুষ্ঠিত হলো ডাকসু নির্বাচন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করলেও কোনো সরকারই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়নি। সামরিক শাসনামলে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার সাহস দেখাতে পারে, গণতান্ত্রিক আমলে পারবে না কেন? আসলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক হিসাবনিকাশই প্রাধান্য পেয়েছে। ’৯০-এর পর যখন যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছিল, কেউই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়নি। ক্ষমতাসীনরা তাদের অনুসারী ছাত্র সংগঠনটির প্রতি ভরসা রাখতে পারেনি বলেই ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন আটকে আছে বহু বছর ধরে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষাঙ্গনে বেড়েছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপসংস্কৃতি, মাদকের বিস্তার। সব ধরনের অন্যায়-অবিচার রুখে দিতে এবং নেতা তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংগঠনের নানা পদে যারা আছেন তারা মনে করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। নানা গোষ্ঠী নানা স্বার্থে তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে দেয় না। শিক্ষকদের নির্বাচন হয়, সিনেট-সিন্ডিকেট নির্বাচন হয়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়, অথচ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন না হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাহসের অভাবকে দায়ী করেছেন।

গত বছর এক অনুষ্ঠানে সে সময়ের সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ থাকা জরুরি।’ তার মন্তব্য নিয়ে জনমত জরিপ চালিয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিক। ওই জরিপে অভিমতদাতাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ লোক মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ ‘না’ বলেছেন আর ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ পাঠক কোনো মন্তব্য করেননি। পত্রিকাটির অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠের বিষয়টির প্রতি সমর্থন এ বিষয়ে বাস্তবতারই প্রতিফলন। নব্বই দশকের পর এ দেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। কিছু কলেজে হলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। ফলে ছাত্র সংসদ নামের সংগঠনটি যে বর্তমানে মৃতাবস্থায় রয়েছে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি, জিএস-এর একটা আলাদা কদর সবসময়ই ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায়। সাধারণ মানুষের মনে এ ধারণাটি ছিল যে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি-জিএসরা সচেতন ছাত্রদের ভোটে নির্বাচিত। তাই তারা সৎ, যোগ্য এবং অবশ্যই মেধাবী। ফলে এলাকায় তাদের একটি অবস্থান তৈরি হয়ে যেত। স্থানীয় ব্যক্তিরা সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যায় ভিপি-জিএসের দ্বারস্থ হতেন। সমাধানও পেতেন। ফলে নিজস্ব নেতৃত্বের গুণে ওই ভিপি-জিএসদের অনেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিতেন। অনেকেই বলে থাকেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নেতৃত্ব সৃষ্টির সূতিকাগার, যা আলোচনার শুরুতে বলার চেষ্টা করেছি। কথাটির যথার্থতা অস্বীকার করার উপায়ও নেই।

সঠিক ও যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে এবং বিদ্যাপীঠ সন্ত্রাস, মাদক, অপসংস্কৃতি মুক্ত করে গড়ে তুলতে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। বর্তমান ধারার ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন না ঘটলে ওই ছাত্র সংসদ জাতির বোঝা ছাড়া আর কিছুই হবে না, তা বলা যায় নিশ্চিতভাবে। সুতরাং বিষয়টি সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলকেই অনুধাবন করতে হবে। বর্তমান সময়টি বুঝি সে কথাই বলছে।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

zafornatorenews@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads