আর্থিক অনটনের কারণে যখন অনেকে সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দূরে থাক, ন্যূনতম লেখাপড়াও শেখাতে পারছেন না, জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ঋষিপাড়ার ষাটোর্ধ জবেদ আলি স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মেয়ে দুটিকে মানুষ করার প্রত্যয়ে নেমেছেন জীবনের কঠিনতম যুদ্ধে। প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপে কোণঠাসা ৬২ বছরের জবেদ আলীকে দেখে মনে হয় তিনি আশির কাছাকাছি বয়সের। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সব মৌসুমেই তিনি ভোর সকালে বেরিয়ে পড়েন একপাল ছাগল নিয়ে মাঠে। নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমিতে চরান তার প্রিয় ছাগলপাল। ঈশারায় আর গলার শব্দে নিয়ন্ত্রিত ছাগলগুলো যেন তার সন্তান। বর্ষা মৌসুমে মাঠ যখন পানিতে তলিয়ে যায়, ক্ষেতের আইলের ঘাস খাইয়ে কোনো প্রকারে বাঁচিয়ে রাখেন প্রাণিগুলোকে। দৃঢ়চেতা এ মানুষটি তার দুটি মেয়ের একটিকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করিয়েছেন এবং অন্যটি এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন।
জবেদ আলী জানালেন, অভাব-অনটনের জন্য তার বাপ-মা তাকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। কোনোপ্রকারে সই-স্বাক্ষর করতে পারেন যৎসামান্য লেখাপড়া জানা এ মানুষটি। কিন্তু সন্তানদের মানুষ করতে তার চিন্তার অব্দি ছিল না। তাই শৈশব থেকেই দারুণ অর্থকষ্টে নিপতিত জবেদ আলী ২-১টি ছাগল মাঠে চরাতে শুরু করেন। অতি কষ্টে প্রথম সন্তান ছেলেকে বেশি দূর না পড়াতে পারলেও কন্যাসন্তান দুটির প্রতি তিনি সুদৃষ্টি রেখেছেন খেয়ে না খেয়ে। বড় মেয়েটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর স্বামীর সংসারে আর ছোট মেয়েটির মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হবে করেনা মহামারীর ছুটি শেষ হলেই। বাপের হাতে হাত মিলিয়ে ছেলেটি হরিণাকুন্ডু শহরে দর্জির কাজ করেন।
জবেদ আলী জানান, তার পারিবারিক খামারে এ মুহূর্তে ২৪টি ছাগল রয়েছে। ধাড়ি (মেয়ে) ছাগলগুলো প্রতিবছর বাচ্চা দিয়ে বাড়িয়ে চলেছে তাদের বহর আর দরকার হলেই তিনি দু-একটি বেঁচে ছোট মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের কাজে লাগান। নিজে লেখাপড়া না জানলেও সন্তানদের চোখে, বিশেষ করে মেয়ে দুটির চোখের আলো ফুটিয়েছেন তিনি।