চিত্রায় এখনো  ভোঁদড়ে মাছ শিকার

নড়াইলে ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করছেন এক জেলে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জীব ও পরিবেশ

চিত্রায় এখনো  ভোঁদড়ে মাছ শিকার

  • এস এম হালিম মন্টু, নড়াইল
  • প্রকাশিত ৪ অক্টোবর, ২০১৮

নড়াইলের চিত্রা নদীসহ বিভিন্ন খালে জেলেদের ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরতে দেখা যায়। জেলার নদীতীরবর্তী প্রায় ৩৫টি জেলে পরিবার এ পদ্ধতিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে একসময় অন্তত ২০০ জেলে পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেলার নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীর তীরে বসবাসকারী পরিবারগুলো ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরত। কালের আবর্তে এ পদ্ধতিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরার পদ্ধতিটি বেশ চমকপ্রদ। জেলেদের নৌকার এক প্রান্তে বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করা ঘরে ভোঁদড় আটকে রাখা হয়। জেলেরা মাছ ধরার জন্য ত্রিভুজ আকৃতির জাল ব্যবহার করেন। নদীতে জাল ফেলার সময় ভোঁদড়ের ঘরের দরজা খুলে জালের দু’পাশে পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। পানিতে নেমে ভোঁদড়রা মাছকে তাড়িয়ে জালের মধ্যে নিয়ে এলে জেলেরা জাল টেনে ডাঙায় ওঠান। বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নৌকা আর ভোঁদড় নিয়ে নদীপথে পাড়ি জমান স্থানীয় জেলেরা। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা সারা রাত মাছ ধরেন এবং সকালে সেগুলো বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন।

লস্করপুর গ্রামের সমীর বিশ্বাস বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা প্রায় ২০০ বছর ধরে ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরে আসছি। ভোঁদড়রা যেন আমাদের পরিবারেরই সদস্য। এরা আমাদের জীবন-জীবিকাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একজোড়া ভোঁদড়ের অনেক দাম। এ কারণে অনেকেই ভোঁদড়ের মাধ্যমে মাছ ধরতে পারে না। বর্তমানে নদী ও খাল-বিলে পানি ও মাছ কমে গেছে। ফলে এ পদ্ধতি ও পেশাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।

গোয়ালবাড়ীর শচীন বিশ্বাস জানান, একসময় আমাদের জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেড় থেকে দুইশ পরিবারের সদস্য ভোঁদড়ের সহায়তায় বিশেষ পদ্ধতিতে মাছ ধরতেন। কিন্তু বর্তমানে নদী-খালে পানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মাছের পরিমাণও কমে যাওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সহযোগিতার উদ্যোগ না নিলে প্রাচীন এ পদ্ধতি যেকোনো সময় চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

           

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads