চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্ত

ডাক্তারের সঙ্গে মন খুলে কথা বললে রোগীর ৮০ শতাংশ এমনিই ভালো হয়ে যায়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ডাক্তার ডাকো

চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্ত

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সে অনেক দিন আগের কথা। শুনতে এখন তা রূপকথার গল্পের মতোই শোনাবে। একসময় বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে প্রথম শব্দটি উচ্চারিত হতো ডাক্তার ডাকো। অর্থাৎ ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে এনে চিকিৎসা নাও। সেকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। ছিল না অনলাইন, ইন্টারনেট, ফেসবুক আর মোবাইল ফোন। ল্যান্ড ফোনের ব্যবহারও ছিল খুব সীমিত। তাই গ্রামে কিংবা শহরে তখন অসুস্থ রোগীকে টানাহেঁচড়া না করে বরং ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে আনা হতো। ডাক্তার এসে রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দিতেন। সে সময় রোগীর বাড়িতে ডাক্তার আসতেন আরোগ্যের ভরসা নিয়ে, অতিথি হয়েও। এই দিন অনেক বছর আগেই পাল্টেছে। একালে রোগীদের ভিড় হয় ডাক্তারের চেম্বারে। রোগী সে যতই অসুস্থতায় কাতর থাকুক না কেন, তাকেই ছুটে যেতে হবে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে। আর দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে সিরিয়াল নম্বরে অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে থাকো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ যেন ডাক্তারের কাছে ‘রোগীকে ডাকো’র অবস্থা। চিকিৎসায় এই বৈপরীত্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সেবা থেকে মহাবাণিজ্যে রূপান্তর করেছে বৈকি!

একবিংশ শতাব্দীতে এসে যদি আপনাকে কেউ বলে হাসপাতালে বা চেম্বারে নয়, বাসায় ডাক্তারকে ডাকো, একথা শুনে হয়তোবা আপনি গায়ে চিমটি কেটে দেখবেন- আপনি রূপকথার রাজ্যে, নাকি জঞ্জালের পৃথিবীতে আছেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই ডিজিটাল যুগে এমনিভাবে সেই পুরনো সেবাকে নিজেদের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে অনলাইন, ফেসবুকভিত্তিক সেবা কার্যক্রম ডাক্তার ডাকো। অর্থাৎ আপনি বা আপনার বাসার কেউ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক আপনি নিজ বাসায় ডাক্তার ডেকে পাঠাতে পারেন। উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে- কিছু আন্তরিক, পরিশ্রমী ও অভিজ্ঞ ডাক্তার প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন আমাদের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে। অনলাইনভিত্তিক চিকিৎসাসেবা ডাক্তার ডাকো- বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় পুরনো ঐতিহ্যকে নতুন আদলে নিয়ে এসেছে আমাদের নাগরিক জীবনে। স্বাস্থ্যসেবার এই নতুন ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব ডাক্তার ডাকো’র উদ্যোক্তা ফয়সল আহমেদের সঙ্গে আলাপচারিতায়-

ডাক্তার ডাকো উদ্যোগের চিন্তাটা কেন এলো?

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের দেশে একসময় ডাক্তার বাসায় আসতেন। ডাক্তাররা ছিলেন পরিবারের বন্ধু। সময়ের পরিবর্তনের কারণে সবকিছু পাল্টে গেছে। বাণিজ্যের কাছে সেবা এখন পরাস্ত। চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ অবস্থায় নাগরিকদের চিকিৎসাসেবায় কিছুটা পরিবর্তন আনার লক্ষ্যেই আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করি, রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারলে আর ডাক্তার  রোগীকে সাহস দিলে ৮০ শতাংশ রোগ এমনিই ভালো হয়ে যায়। আমাদের এই সার্ভিস সেই বিশ্বাসকেই জাগাবে।

ডাক্তার ডাকো সার্ভিস সম্পর্কে খুলে বলুন।

স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক একটি স্টার্টআপ ‘ডাক্তার ডাকো’। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ‘Home Doctor Service’ সেবা আছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এই সেবা বহু আগে থেকেই আছে। আমাদের দেশে এটি নতুন ধারণা এবং প্রথম উদ্যোগ।

এই উদ্যোগটির বাস্তবতা কী?

দেখুন, এখন হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিকের অভাব নেই। তারপরও রোগীরা স্বস্তিতে সেবা নিতে পারছেন না। প্রয়োজনের সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। আবার ডাক্তারের সেবা নিতে গিয়ে সিরিয়াল আর দীর্ঘ অপেক্ষায় রোগীদের অতিষ্ঠ অবস্থা তৈরি হয়। আকস্মিক বিপদে যখন রোগীর অবস্থা খারাপ, ঢাকা শহরের যানজট ঠেলে বহুতল ভবন কিংবা ঘিঞ্জি এলাকা থেকে রোগী নিয়ে যাওয়াটাও বেজায় কঠিন। এমন বাস্তবতার আলোকে আমরা অনেক ভেবেচিন্তে এই উদ্যোগটি নিয়েছি, যেখানে রোগী বা রোগীর পরিবার-পরিজন পারিবারিক পরিবেশে চিকিৎসাসেবা নিয়ে স্বস্তি পেতে পারেন।

আপনার সেবার বিশেষত্ব কী?

প্রথমত আমাদের ডাক্তাররা কল পেয়ে রোগীর বাসায় ছুটে যাবেন। সেখানে গিয়ে সময় নিয়ে রোগী দেখবেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ওষুধ কিংবা ডায়াগনস্টিক টেস্ট প্রদান করবেন। অহেতুক কোনো ওষুধ কিংবা ডায়াগনস্টিক টেস্ট দেবেন না। তবে  কোনোভাবেই ডায়াগনস্টিক টেস্ট করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সেন্টারকে রেফার করা হবে না।

আপনাদের এই সেবা সার্ভিসে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

ভালো। তবে এটি একটি নতুন সেবা কার্যক্রম। এর যত প্রচার হবে, ততই জনপ্রিয়তা বাড়বে। যেসব রোগীর ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর অথবা যারা রাস্তার যানজট কিংবা চেম্বারের লম্বা সিরিয়াল এড়াতে চান, তাদের জন্য ‘ডাক্তার ডাকো’ একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সাড়া পাচ্ছি, সাড়া আরো বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।

কোন পর্যায়ের চিকিৎসকদের সেবা পাওয়া যাবে?

আমাদের সব ডাক্তার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাদের এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং তাদের সবারই বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। চাইলে http://bmdc.org.bd এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে ডাক্তারের দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ডাক্তারি সনদের সত্যতা যাচাই করা যাবে। প্রত্যেকে ইন্টার্নশিপের পর অন্তত দু’বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন করেছেন। তাছাড়া আমাদের বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ডাক্তারদের নিয়ে গঠন করা একটি নির্বাচনী বোর্ডের মাধ্যমে ডাক্তার নির্বাচিত হন। তারপর ‘ডাক্তার ডাকো’র বিশেষায়িত ডাক্তার প্যানেল পরিচালিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ‘ডাক্তার ডাকো’তে যোগদান করেন। আবার এখানে ২৮ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তারও রয়েছেন।

এই সার্ভিস কি ২৪ ঘণ্টা দেওয়া হবে?

না, রোগী দেখার সময় নির্ধারিত আছে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে ২৪ ঘণ্টা সার্ভিসের ব্যাপারটি ভবিষ্যতে হতেও পারে।

কোন কোন এলাকায় এই কার্যক্রম চলছে?

আপনাদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে আমরা সত্যি অভিভূত, আনন্দিত। শুরুর দিকেই এতটা সাড়া পাব এটাই আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। একটি ভালো উদ্যোগে যে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তা আবারো প্রমাণিত হলো। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার, আমাদের ডাক্তাররা যেসব রোগী দেখেছেন, সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

আগামী অক্টোবরের মধ্যেই পুরো ঢাকা শহর আমাদের সার্ভিস এরিয়ার আওতায় আনার কাজ চলছে। এজন্য আপনাদের দোয়া ও সমর্থন আমাদের একান্ত কাম্য। এ বিষয়ে আপডেট সব খবরাখবর আমাদের ফেসবুক  পেজ- Facebook.com/DoctorDako এর মাধ্যমে জানতে পারবেন।

ডাক্তার বাসায় ডেকে নিলে ডাক্তার ফি বা সার্ভিস চার্জ কেমন পড়বে?

ফেসবুকে অথবা ০১৮১১ ৪৪৬৬০০ নম্বরে ফোন কল করে অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার বাসায় নিতে পারবেন। ডাক্তারের সন্মানীর ক্ষেত্রে ২ বছর থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডাক্তারদের সম্মানী ৬০০ টাকা। আবার সিনিয়র ডাক্তারের ক্ষেত্রে ১১ বছর থেকে ২৮ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডাক্তারদের  ক্ষেত্রে সম্মানী ১০০০ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই সম্মানীর সঙ্গে ডাক্তার ও তার সহযোগীর আসা-যাওয়ার খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। রোগী দেখা শেষ হলে সম্মানীর অর্থ ডাক্তারকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads