সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম আরো কমেছে। তবে পাকা টমেটোর দাম এখনো বেশ চড়া। মানভেদে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন এই সবজি। এ ছাড়া হুট করেই দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ থেকে ১০ এবং হালিতে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। এছাড়া নতুন ধান উঠলেও এখনো নামেনি চালের দর। উল্টো গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে অত্যাবশ্যকীয় এই ভোগ্য পণ্যটির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে কুয়াশার কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় আগে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সফিক এহসানে বলেন, ‘কুয়াশার কারণে ফেরিঘাটে ট্রাক মাল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে আমদানি করা বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজের দাম যথারীতি আগের মতোই রয়েছে। শীতের সবজির ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকায় এবং শিম, মুলা ও শালগমের ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম গত সপ্তাহের দামেই এ সপ্তাহে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আকার ও মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যেই মিলছে লাউ। এছাড়া গাজর ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, উস্তা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা এবং পটল ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকও অনেকটা স্বস্তায় মিলছে বাজারগুলোতে।
এদিকে, চালের উৎপাদন বাড়লেও গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম মানছে না কেউই। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যনুযায়ী, এক দশক আগে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। এছাড়া দেশের উৎপাদন ও পণ্যের দামের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ টনের বেশি। তারপরও দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। অথচ এর পরও প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব শ্রেণির মানুষের অত্যাবশ্যকীয় এই ভোগ্যপণ্যটির দাম।
রাজধানীর বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. নিজাম উদ্দিন চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ‘মিল মালিকরা চালের মূল উৎপাদক। আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু কিনে আনি। তাই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই।’ তবে নিজাম উদ্দিন মনে করেন, এ বছর ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে। আর এ কারণেই হয়তো মিল মালিকরা চালের বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।’ এছাড়া ধানের উৎপাদন সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানের তুলনায় কম হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার যদি বেশি করে ধান ক্রয় করে খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ না বাড়ায় তাহলে ভবিষ্যতে চালের দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তারা।