দেশে অবৈধ এবং চোরাই মোবাইল ফোন আমদানি ও ব্যবহার বন্ধে এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ (এনএআইডি) চালু হয়েছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সেবা চালু করেছে। গতকাল বিটিআরসি কার্যালয়ে এ সেবার উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এ সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, অবৈধ পথে আমদানি করা মোবাইল ফোন শনাক্ত করার জন্য এর আগে কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে এখন সহজেই এই কাজটি করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, দিন দিনই ডিজিটাল অপরাধের পরিমাণ বাড়ছে। এসব ডিজিটাল অপরাধ ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, এখন থেকে অবৈধ পথে আমদানি করা মোবাইল ফোনের পাশাপাশি চুরি যাওয়া ফোনও সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এর ফলে অবৈধ পথে ফোন আমদানি যেমন কমবে, তেমনি কমে আসবে ফোন ছিনতাইয়ের পরিমাণও। বৈধ পথে ফোন আমদানি বাড়ায় এ খাত থেকে সরকারের আয় বাড়বে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই তাদের ফোন কেনেন অবৈধ বাজার থেকে। এর ফলে সরকার প্রায় ১২০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। তবে ডাটাবেজ তৈরি হওয়ায় এখন এর পরিমাণ কমে আসবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশে মোবাইল ফোন আমদানি এবং উৎপাদনের সঠিক সংখ্যা জানার পাশাপাশি পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ করতে এ সিস্টেমটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে আমদানি করা সব মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের ডাটাবেজ পাওয়া যাবে। এছাড়া দেশে কী পরিমাণ মানুষ স্মার্টফোন এবং ফিচার ফোন ব্যবহার করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যানও মিলবে আরো সহজেই।
এই ডাটাবেজ চালুর ফলে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই কমে আসবে। কারণ চুরি যাওয়া ফোনের আইএমইআই নম্বর ব্লক করে দেওয়ার মাধ্যমে ফোনটি মূলত অকার্যকর করে দেওয়া যাবে। এছাড়া ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) তৈরির ক্ষেত্রেও এই ডাটাবেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এনইআইআর কার্যকর করা হলে অবৈধ পথে আমদানি করা ফোন দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্কে কাজ করবে না।
এছাড়া সিস্টেমটি চালু হলে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করতে অনলাইনে আবেদন এবং অনলাইনেই অনাপত্তিপত্র গ্রহণ সম্ভব হবে। জনসাধারণ মোবাইল ফোন কেনার আগে ডাটাবেজ হতে তথ্য যাচাই করতে পারবেন। ফলে অবৈধ পথে আমদানি করা সেটের তথ্য পাওয়া যাবে না। এতে মানুষ এসব ফোন কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। এর প্রেক্ষিতে অবৈধ পথে আমদানি হ্রাস পাবে। অবৈধ পথে আমদানি হ্রাস করার মাধ্যমে এ খাত থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া দেশের মোবাইল ফোন খাতের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে, যা বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের ধরন, ফিচার ফোন হতে স্মার্টফোন গ্রহণের প্রবণতা, কী পরিমাণ হ্যান্ডসেট প্রতিবছর দেশের বাজারে বিক্রি হয়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের সেটসংখ্যা ইত্যাদি তথ্য যাচাই-বাছাই করে টেলিকম সেক্টরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শুধুমাত্র ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি হতে বৈধভাবে আমদানি করা বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের বেশিরভাগ আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর বাইরে অন্য যেকোনো ধরনের আইএমইআই নম্বর বিটিআরসির ডাটাবেজে আপাতত পাওয়া যাবে না।
তবে এখন থেকে যত হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হবে তা যথাযথ যাচাই-বাছাই করে বিটিআরসির ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশন থেকে কণউ লিখে স্পেস দিয়ে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখে ১৬০০২ নম্বরে এসএমএস পাঠালে ফিরতি মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হবে সেটি ডাটাবেজে আছে কি না।