চামড়া খাতে রফতানি কমছেই

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

চামড়া খাতে রফতানি কমছেই

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর, ২০১৮

২০২১ সালের মধ্যে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করেছিল সরকার। কিন্তু বছর যত যাচ্ছে, ততই উল্টোপথে হাঁটছে পণ্যটির রফতানি আয়ের হিসাব। কারণ গত তিন বছর টানা কমেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি। চলতি অর্থবছরেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরে রফতানি কমে ১০০ কোটির নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তা গেল বছর কমে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চামড়া রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময় থেকেও ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চামড়া রফতানি হয়েছিল ৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যা এবার কমে হয়েছে ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি ঈদের পর এখন ব্যাপক চামড়ার মজুত রয়েছে। তবে দাম না থাকা ও নতুন বাজার তৈরি না হওয়ায় রফতানি স্থবির হয়ে রয়েছে। এখন শুধু চীনেই বেশি চামড়া রফতানি হচ্ছে। যদিও ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা বাংলাদেশি চামড়ার বড় ক্রেতা। তবে সাভারে ট্যানারি হস্তান্তরের জটিলতায় এসব দেশের প্রচুর ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে গেছে। আর এখনো শিল্পনগরী সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হওয়ায় সেসব ক্রেতা ফেরেনি। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের সময় সেরা আমদানিকারক দেশগুলোর বায়াররা আমাদের এখান থেকে চলে গেছে। ওদের এখনো আমরা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এ কারণে এখন আমরা শুধু চীন-নির্ভর হয়ে গেছি।

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় চীনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ট্যাক্স বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে চীন এখন ওই পরিমাণ দাম কম দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে। এ কারণে রফতানি সার্বিকভাবে কমেছে। যারা এরমধ্যে রফতানি করছে সেটা কম দামে।

সাখাওয়াত উল্লাহ আরো বলেন, এখন আমরা সাভারের চামড়া শিল্পনগরী সম্পূর্ণ চালু না করা পর্যন্ত আগের ক্রেতাদের ফেরাতে পারব না। ওইখানে এখনো সিইটিপির (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) সমস্যা সমাধান হয়নি। আরো অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছরই চামড়ার সরবরাহ ৫ থেকে ৭ শতাংশ করে বাড়ছে। এতে সরবরাহ আর রফতানির বিপরীতমুখী চরিত্রে বাড়ছে অবিক্রীত চামড়ার পরিমাণ। যার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে কাঁচা চামড়ার দামেও। মূলত এ কারণে গত কোরবানি ঈদের সময় কাঁচা চামড়ার দাম ওঠেনি। আর গত দু’বছরের চামড়া এখন বিভিন্ন ট্যানারিতে জমে রয়েছে।

বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর কমপ্লায়েন্সের ইস্যুতে পুরনো বায়ারকে ফিরিয়ে আনতে পারছি না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমেছে। এতে আমরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। চীনের সঙ্গেও টানাপড়েনে অনেক রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রমেই খারাপ অবস্থায় যাচ্ছে এ খাত।

বাংলাদেশ থেকে চামড়ার পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য হিসেবে জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রফতনি হয়। এ ছাড়া চামড়ার তৈরি নানা ‘ফ্যান্সি’ পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এসব পণ্য তৈরি করে বিশ্বের বাজারে পাঠাচ্ছে। জুতা ছাড়া অন্যান্য ওইসব পণ্যের রফতানিও কমেছে চলতি অর্থবছর।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads