চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, পদ্মায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার .৫৬ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ২২.৫০ সেমি) এবং মহানন্দায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার .৫৮ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ২১ সেমি) নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার আলাতুলি, নারায়ণপুর, চর অনুপনগর, শাহজাহানপুর ও চরবাগডাঙা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে। এই ৫ ইউনিয়নের ২ হাজার ২’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, দুর্লভপুর, মনাকষা, উজিরপুর, ঘোড়াপাখিয়া ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৬০০ পানিবন্দি পরিবারের মাঝে চালসহ শুকনো বিতরণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার চরবাগডাঙা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য কামরুজ্জামান টুটুল জানান, গোঠাপাড়া, বাগানপাড়া, চাকপাড়া, গিধনিপাড়া, মালবাগডাঙা গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরবাগডাঙা বিওপি এলাকার গিধনিপাড়ায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, হাকিমপুর, সেকালিপুর রাবনপাড়া, দুর্লভপুর ও নরেন্দ্রপুরের বেশকিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি টানা দুদিনের বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো রান্না করতে পারছে না।
চর অনুপনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, নতুনপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, লম্বাপাড়া, মোন্নাপাড়া, চর অনুপনগর বাগানপাড়া, কলাবাগান ও চরকাশেমপুর ক্যানেলপাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, পাঁকা, দুর্লভপুর, মনাকষা, উজিরপুর, ঘোড়াপাখিয়া ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ সামগ্রীর চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত বন্যাদূর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর মাসকলাই তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৫৮০ হেক্টর সবজি ও ৭০ হেক্টর হলুদ নষ্ট হয়ে গেছে।
অপরদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, আলাতুলি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ৫’শ পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৪’শ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এ কে এম তাজকির-উজ-জামান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে শুকনো খাবারের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।