বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

চলে গেলেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠা পল অ্যালেন। নন-হজকিন্স লিম্ফোমা নামের ক্যানসারে আক্রান্ত পল সোমবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনের সিয়াটলে মারা যান। ৬৫ বছর বয়সী পল ২০০৯ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাগ্রহণ করেছিলেন। এরপর স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে একই রোগে পুনরায় আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

এদিকে পল অ্যালেনের মৃত্যুতে তার স্কুল জীবনের বন্ধু এবং মাইক্রোসফটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক বিবৃতিতে বিল গেটস বলেন, পল না থাকলে পার্সোনাল কম্পিউটিং সম্ভব হতো না। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই নয়, আমরা বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজেও একসঙ্গে কাজ করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় পলের আরো সময় পাওনা ছিল। তবু প্রযুক্তির বিশ্বে ও মানবকল্যাণে তার অবদান আজীবন বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। আমিও ভীষণভাবে তার অভাববোধ করব।

জানা যায়, সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে পলের স্টেজ ১-এ হজকিন্স লিম্ফোমা ক্যানসার ধরা পড়ে। তার কয়েক মাস রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়ার পর তাকে বোন ম্যারো ট্রান্সফার করতে হয়। এরপর ২০০৯ সালে তার নন-হজকিন্স লিম্ফোমা ধরা পরে। তখন থেকেই তার লিম্ফাটিক ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও গত দুই সপ্তাহ আগে রোগটি পুনরায় তার শরীরে ফিরে আসে এবং মৃত্যু হয়।

১৯৫৩ সালে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে জন্মগ্রহণ করেন পল অ্যালেন। অ্যালেন গেটসের সঙ্গে মিলে ১৯৭৫ সালে নিউ মেক্সিকোর অ্যালবাকের্কিতে মাইক্রোসফট গঠন করেন এবং বেসিক প্রোগ্রামিং ভাষার ইন্টারপ্রেটার বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮০ সালে অ্যালেনের নেতৃত্বে মাইক্রোসফট ৫০ হাজার ডলারে কিউডস নামের অপারেটিং সিস্টেম কিনে নেয়। আইবিএমের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে একেবারে শূন্য থেকে কোনো অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা গেটস ও অ্যালেন সম্ভবপর বলে মনে করেননি। তাই তারা সম্পূর্ণ কর্মক্ষম কিউডস কেনার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেটির কোডের ওপর কিছু পরিবর্তন সাধন করে আইবিএমের চাহিদা পূরণ করেন। মাইক্রোসফটের এই প্রোগ্রামটিই পরবর্তী সময়ে আইবিএমের নতুন পিসিগুলোর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ভবিষ্যতে মাইক্রোসফটের প্রসারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

২০০০ সালের নভেম্বর মাসে অ্যালেন মাইক্রোসফটের বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি মাইক্রোসফটের ৬৮ মিলিয়ন শেয়ার বেচে দেন। এরপরও তার কাছে কোম্পানিটির ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ারের মালিকানা থাকে। যার বদৌলতে তিনি জীবনের বাকি সময় প্রমোদতরী, চিত্রশিল্প, রক মিউজিক, স্পোর্টস টিম, ব্রেন রিসার্চ ও রিয়েল স্টেট ব্যবসায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় করার সুযোগ পান তিনি।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অ্যালেন ফোর্বসের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকা অনুযায়ী ৪৪তম অবস্থান ছিলেন। তিনি মোট ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি ডলারের মালিক ছিলেন। অ্যালেন মার্কিন জাতীয় ফুটবল লীগের সিয়াটল সিহক্স এবং জাতীয় বাস্কেটবল লীগের পোর্টল্যান্ড ট্রেইলব্লেজার্স দল দুটির মালিক ছিলেন।

জীবদ্দশায় তার দানকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল দুই বিলিয়ন বা দুইশ’ কোটি ডলার। সমুদ্রবিজ্ঞান, শিক্ষা খাত ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তিনি এ অর্থ দান করেছিলেন। নিভৃতচারী অ্যালেন ছিলেন অবিবাহিত। বিপুল পরিমাণ সম্পদের জন্য তিনি কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। তাই তার মৃত্যুর পর নিজের অধিকাংশ সম্পদ বিভিন্ন ত্রাণ সংক্রান্ত কাজে দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

সূত্র : ইন্টারনেট এবং উইকিপিডিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads