পাবনার চাটমোহরসহ বৃহত্তম চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে চলছে নির্বিচারে বক নিধন। খাল-বিল, জলাশয় গুলো যাচ্ছে শুকিয়ে। শুকিয়ে যাওয়া এসব জলাশয় গুলোতে মিলছে পুঁটি, খলসে, দারকেসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ। এসব মাছ খাওয়ার লোভেই চলনবিলে আশ্রয় নিয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে বকের দল। এক শ্রেণী লোভী মানুষ সুযোগ নিয়েছে এসব বক শিকারের। তারা চলনবিলের বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি পুঁতে কলাপাতা, খেজুর ডাল দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করেছেন ফাঁদ।
এসব ফাঁদের সামনে একটি বাঁশের মগডালে রাখা হয় শিকারি বক। বকের ঝাঁক যখন নির্মিত ফাঁদের ওপর দিয়ে দল বেঁধে উড়ে যায়, তখন শিকারি বকটিকে নাচাতে থাকে। এক পর্যায়ে শিকারি বকটি ডাকাডাকি শুরু করলে বকের ঝাঁকটি বিশেষ ভাবে নির্মিত ফাঁদ ঘরের ওপর বসে। তখন শিকারি ভেতর থেকে একে একে বক ধরে খাঁচায় ভরে। পেশাদার ও শৌখিন শিকারিরা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বক শিকার করে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি ও ভূরিভোজ করছে।
বিশেষ করে, চলনবিলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিল থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। আরো জানা গেছে, এ সময় বিলে প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায়। এ সময় বক ঝাঁকবেঁধে বিলে খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসে। এ সুযোগে চলনবিলের কমপক্ষে শতাধিক স্থানে শিকারিরা জাল পেতে, বিষটোপে, বড়শিতে মাছ গেঁথে ও ফাঁদ পেতে নির্বিচারে বক শিকার করছে। চলনবিলের যেসব স্থানে বক পড়ে, সেখানে সাত সকালে পেশাদার শিকারিরা বক ধরার উপকরণ নিয়ে বিলে নেমে পড়ে। তারা তাদের কৌশলে সাদা বক ও কানি বক ধরে খাঁচায় ভরে। আবার অনেক শৌখিন শিকারি এয়ারগান দিয়ে দিন দুপুরে বক ধরে ভূরিভোজে মেতে উঠছে।
বিলপাড়ার তুহিন জানান, বর্তমানে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও গুরুদাসপুরের মধ্য বিলে সবচেয়ে বেশি বক শিকার হচ্ছে। আবার এসব বক প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে। চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, এ এলাকার বিলে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ' বক শিকার হচ্ছে। শিকার করা প্রতিজোড়া বক ২০০ থেকে ২’শ ৫০ টাকায় বিক্রিও হচ্ছে। বড়াইগ্রাম উপজেলার চামটা গ্রামের ওয়াসিম আকরাম জানান, বিভিন্ন বিলে প্রতিদিনই শিকারীরা হাজার হাজার টাকা বক শিকার করে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছে। আমি জোনাইল বাজারে এক জোড়া বক ২০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। শিকারীরা প্রায় প্রতিদিনই গ্রামে ও বাজারে বক বিক্রি করছে।
চাটমোহর উপজেলার পৌর সদরের নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, মাঝের মধ্যে পৌর সদরের মোড়ে সকালে বক বিক্রি করতে দেখা যায়। শিকারীরা চড়া দামে বক বিক্রি করে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, চলনবিলের উপজেলাগুলোর বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে বকের মাংস বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছর বক শিকার করে বাজারে বিক্রি হলেও বন বিভাগ, প্রশাসন কোনো সংশ্লি¬ষ্টদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ (প্রশাসন) সেখ মোঃ নাসীর উদ্দিন জানান, যে কোনো ধরণের পাখি শিকার করা আইনত দন্ডনীয়। চলনবিলে সমন্বিতভাবে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। তবে শিকারিদের পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।