চরম দুশ্চিন্তায় জাতীয় পার্টি

লোগো জাতীয় পার্টি

রাজনীতি

চরম দুশ্চিন্তায় জাতীয় পার্টি

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভেতরে-বাইরে চরম অস্থির জাতীয় পার্টি। ভোটের ২৬ দিন আগেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে নিশ্চিত নন জাপা নেতারা। শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে মনোনয়ন বাণিজ্যেরও। এ নিয়ে দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে চেয়ার ভাঙচুর, অফিসের তালা লাগিয়েছে। এসব নিয়ে ক্ষোভে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা পদত্যাগ, কেউ রাজনীতি থেকে অবসর ও কেউ নিষ্ক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বর্তমান সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবং কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের মুখ খুলছেন না। দলীয় সূত্র বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কত আসনে প্রার্থী দিচ্ছে এটা দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ অবহিত নন। ২১০ আসনে দলের ২৩৩ প্রত্যাশী লাঙল প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রার্থী হতে পারা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। দলটি কত আসনে প্রার্থী দেবে তা এখন নির্ভর করছে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ওপর। এ অবস্থায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে ২০০৮ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় ভুগছে দলটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ৪৯ আসন। ওই ভাগাভাগি ছিল কাগজে-কলমে। রওশন এরশাদের দুটি আসনসহ ১৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা থেকে যায়। আওয়ামী লীগ তখন দলের প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মাত্র ৩৫ আসনে তা করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে যাওয়া ১৪ আসনে জিততে পারেনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। রওশন এরশাদ পরবর্তী সময়ে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যান। আর সংসদের বাইরে থাকতে হয়, তৎকালীন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত কাজী জাফর আহমদকেও। এবার জাপাকে ৪৭ আসন দেওয়ার কথা হয়েছে। মাঠের অবস্থা দেখে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না জাপার নেতারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে আসছেন, মহাজোটের শরিকদের জন্য ৭০ আসন ছাড়া হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রার্থীর তালিকা অনুযায়ী মহাজোটের শরিক জোট-ফ্রন্ট-অ্যালায়েন্স-জাকের পার্টিসহ শতাধিক দলের জন্য মাত্র ৩৬ আসন ছেড়ে বাকিগুলোতে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির জন্য যেসব আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তার মাত্র ২৫টিতে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ চুক্তির ২২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়ে গেছে। যে সংখ্যা ২০০৮ সালে ছিল ১৪-তে।

জোটের সমঝোতার মধ্যে পটুয়াখালী-১, ময়মনসিংহ-৫, ময়মনসিংহ-৭, সিলেট-৫, হবিগঞ্জ-১, কুমিল্লা-২, চট্টগ্রাম-৯ আসন ছাড়াও অন্য ১৫ আসনে প্রার্থী রয়ে গেছে আওয়ামী লীগের।

এদিকে, দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ। অভিযোগ আছে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়েও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের মহাসচিব মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, একটি পক্ষ দলের সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।

গাইবান্ধা-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাইবান্ধা জেলার সভাপতি আবদুর রশিদ। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন নিয়েছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে জয়লাভ করেন তিনি

ফেনী-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন রিন্টু জাতীয় পার্টি ছেড়ে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই আসনে মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় মহাজোট।

লালমনিরহাট-২ আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব রোকনউদ্দিন বাবুল। গাইবান্ধা-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ওই আসনের দুইবারের সাবেক এমপি আবদুর রশিদ সরকার। তিনি গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের উপদেষ্টা। অথচ তার শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে পরপর দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধও হয়।

রাজশাহী-৩ আসনে রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন না দিলে ২৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে জাতীয় পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিটা অনেক আগেই হওয়ার দরকার ছিল। আসন ভাগাভাগি দেরি হওয়ায় দলের মধ্যে এলোমেলা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে দলটির চেয়ারম্যান এরশাদের অসুস্থতা নিয়েও আছে রহস্য। বেশ ক’দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) থাকার পর গত শুক্রবার রাতে বাসায় ফেরেন। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বা দেখা করছেন না।

অপরদিকে, ঋণখেলাপি হওয়ায় পটুয়াখালী-১ আসনে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় সিলেট-৬ আসনে। এ ছাড়া প্রস্তাবক অন্য আসনের ভোটার হওয়ায় খুলনা-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এরশাদুজ্জামান ডলারের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে।  ঋণখেলাপি হওয়ায় রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চুসহ কয়েকজনের মনোনয়ন বাতিলের খবর পাওয়া গেছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads