চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আমরা ভয় করি না। এ বিপ্লব টেকনোলজির ওপর ভিত্তি করে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে অডিটোরিয়ামে ইজেনারেশন গ্রুপের আয়োজনে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব- আমার কি প্রস্তুত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিপ্লব হওয়ার সময় আমরা ছিলাম না। তৃতীয় বিপ্লবের সময় আমরা টের পাইনি। কিন্তু চতুর্থ বিপ্লবে আমরাই নেতৃত্ব দেব। আমাদের নেতৃত্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে টেকনোলজির বিপ্লব।
তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমরা এই বিপ্লবের জন্য আবশ্যক তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও জনবল তৈরিতে প্রধান গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করাও অগ্রাধিকার হিসেবে আছে।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (নিরাপত্তা আইন) করতে পারায় আমি গর্ববোধ করছি বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন বাংলাদেশের মতো দেশ এ আইনটি প্রণয়ন করেছে এজন্য আমি গর্ববোধ করছি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশকেও এখন আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
এ আইন কপি করা ছাড়া তাদের বিকল্প রাস্তা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইনটি প্রণয়নের জন্য কয়েকবার গালাগাল খেয়েছি। তবে আমি সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করি, মার্কিন দূতাবাস পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে এ আইন কপি করে কাজ করছে’ বলে যোগ করেন মন্ত্রী।
ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সর্বশেষ প্রযুক্তি যেমন ব্লকচেইন, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি সলিউশন তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের একেবারেই প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়েছে। আইডিয়া থেকে উৎপাদনের জন্য ‘নেক্সট প্রোডাকশন হাব’ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদেরকে চীনের সেনজেনের মতো বর্ধনশীল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে। বিশ্বে যেভাবে কাজের ধরন পাল্টে যাচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, আমাদেরকে স্থিতিশীল নেতৃত্ব, বদলিযোগ্য দক্ষতা, উদ্ভাবনী মনোভাব এবং মানুষের উপযোগীকরণের পেছনে বিনিয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের বৈপ্লবিক উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা আনছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যেতে বাংলাদেশকে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সুবিধাগুলো গ্রহণ ও ব্যবহারের সোনালি সুযোগ দিচ্ছে।
ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব টেকসই উন্নয়নকে গতিশীল করবে। স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, অ্যানালাইটিক্স এবং আইওটি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ‘স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বর্তমানে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইন্ডাস্ট্রিতে কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে সে বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় নেই। আমাদেরকে ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়ার দক্ষতার ফারাক কমাতে কাজ করতে হবে।
অ্যাসোসিও’র সদ্যবিদায়ী সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে আমাদেরকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে আমাদেরকে সাইবার সিকিউরিটির জন্য নীতিমালা ও অবকাঠামোগত ফ্রেমওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। শিশুরা এখন যারা স্কুলে আছে, যখন তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে নতুন ও যুগান্তকারী প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই ভবিষৎ কর্মক্ষেত্রের চাহিদার মতো করে তাদের তৈরি করতে হবে।
ইজেনারেশনের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন পরিচালক মুশফিক আহমেদ বলেন, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ বা পরবর্তী শিল্পবিপ্লব আলোচিত শব্দের চেয়েও অনেক কিছু। বিশ্বে কানেক্টেড ম্যানুফ্যাকচারিং অথবা স্মার্ট ফ্যাক্টরির আইডিয়া দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বাংলাদেশেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ভালোভাবে শুরু হয়েছে। ভোক্তা এবং ব্যবসাগুলো এআই, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), ব্লকচেইন, ডাটা অ্যানালাইটিক্স ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। উন্নত অর্থনীতির বাংলাদেশের দিকে অগ্রযাত্রায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উন্নয়নের ধাপগুলোকে দ্রুতগতিতে টপকে যাবার সুযোগ এনে দিয়েছে।
ইজেনারেশনের সৌজন্যে এই গোলটেবিল সেশনে সরকারি বেসরকারি খাতের নীতিনির্ধারকদের মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে নীতিমালা প্রণয়ন, গবেষণা, আবেদন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কৌশল হিসেবে নিতে ভূমিকা রাখবে।