ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যয়ী বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যয়ী বাংলাদেশ

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ৬ জানুয়ারি, ২০২১

করোনা মহামারীর কবল থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য ও মহামারী ব্যবস্থাপনা চাপে থাকা সত্ত্বেও গরিব ও দুস্থদের জন্য মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উপযুক্ত আর্থিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে বিশ্ব অর্থনীতির দুয়ার খুলতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির আদেশ আসতে শুরু করেছে। দেশের ভেতরেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। যার ফলে শিগগিরই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে-এমন আশাবাদ করছেন অর্থনীতিবদরা।

একথা সবাই জানে বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস। ১৯৭০-এর প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাস লাখো মানুষ ও উপকূল ভাসিয়ে নিয়ে গেল। বেঁচে থাকা অসহায় মানুষের হাত আবার বলিষ্ঠ ও সক্রিয় হয়ে উঠল। মানুষ দাঁড়াল তাদের পাশে। শূন্য উপকূল, বিরান দ্বীপে আবার প্রাণের সৃষ্টি হলো। মানুষ যখন কেবল মাথা তুলতে শুরু করল, স্বাধীনতাযুদ্ধও আরম্ভ হয়ে গেল। পৃথিবীর অন্যতম একটি নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল সাধারণ মানুষ। লাখো জীবন গেল, যুদ্ধে বিধ্বস্ত হলো সারা দেশ। প্রায় শূন্যের ওপর এ দেশের মানুষেরাই সৃষ্টি করল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। প্রথম বাজেটের ১০ বছর পর ১৯৮২ সালে বাজেটের আকার হলো ৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, তারও ১০ বছর পর ১৯৯২ সালে বাজেটের আকার দাঁড়াল ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। নতুন সহস্রাব্দে ২০০০-০১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩৮ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। বাজেট প্রথম লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ২০১৯-২০ অর্থবছর বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এর প্রায় পুরোটাই দেশীয় সম্পদ।

অর্থনীতি রিকভারির ইঙ্গিত

করোনাকালে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষায় বৈদেশিক তহবিল নিশ্চিত করাসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণেই এ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এ ঘুরে দাঁড়ানো টেকসই হবে বলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে সরকার। দাতা সংস্থারা বলছে, এত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। তবে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির অনেক সূচক রয়েছে। করোনার প্রাথমিক ধাক্কার পর বর্তমানে আমরা অর্থনীতিতে একটা রিকভারির ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। যেটা রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কৃষিখাত-সব জায়গায় ঘুরে দাঁড়ানোর ঈঙ্গিত বহন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, করোনার মাঝেও অনেক নতুন নতুন পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ বলা চলে। বিশেষ করে পিপিই, মাস্ক, এপ্রোন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য যে শিল্প থাকা দরকার তা হলো ফার্মাসিটিক্যালস এবং তৈরি পোশাক খাত। আমাদের এই দুইটি খাতই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এই দুই খাতের মাধ্যমে আমরা উল্লিখিত পণ্যগুলো উৎপাদন করে সরবরাহ করতে পারি। সারাবিশ্বেই বর্তমানে এই পণ্যগুলোর চাহিদা রয়েছে এবং আগামী বেশ কয়েক বছর থাকবে। এমনকি ভ্যাকসিন আসলেও পিপিই, মাস্ক ভেন্টিলেটরের চাহিদা বন্ধ হবে না।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার : জিডিপির প্রবৃদ্ধি

সময়ের সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে আবার সচল হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এইচএসবিসি কো-হেড অব এশিয়ান ইকোনমিকস রিসার্চ ফ্রেডরিক নিউম্যান এমন মন্তব্য করেছেন।

এইচএসবিসি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি অ্যান্ড সিলভার লাইনিংস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। নিউম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ সন্তোষজনক অর্থনৈতিক সহনশীলতা দেখিয়ে চলেছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূলে ছিল সুদৃঢ় নিয়মানুবর্তিতা, গ্রহণযোগ্য মুদ্রাস্টম্ফীতি ও বহির্গামী পেমেন্টের শক্তিশালী অবস্থান। তার মতে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে। রেমিট্যান্স বেড়ে স্থানীয় চাহিদাকে সামাল দিয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তার অর্থনীতিকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং চলতি হিসাবের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিকে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারবে। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। ভালো খবর হলো মহামারীতে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের মধ্যে অর্ডার-ধসের পর ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। আর সেটিই ভূমিকা রাখছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে। দেশের প্রধান রপ্তানি শিল্প অর্থাৎ পোশাক খাতের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বড় বড় বাজার থেকে বড়দিনের অর্ডার পাবেন বলে আশা করছেন তারা। এ ছাড়া বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহও বেড়েছে। ফলে মহামারীর কারণে আধা-লকডাউন আরোপের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে ছাড়তে শুরু করেছে।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু

আইএমএফ বলছে, করোনার আগের মতো ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশকে আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। ৮ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনের আগাম পূর্বাভাস, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাংক কারণ হিসেবে দেখিয়েছে, অর্থনীতিতে শ্লথগতি। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীদের আয় কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ভোগ করার প্রবণতা কমে গেছে। এ ছাড়া রপ্তানি ও প্রবাসি আয় কম হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা আছে। তবে আগামী অর্থবছরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।  ২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আইএমএফের এবারের পূর্বাভাস হলো, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, জাপানের মতো দেশে জিডিপি সংকোচন হবে। এর মানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বেশ ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তাই চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এই দাতা সংস্থাটি। চীন, ভারত ও মালদ্বীপের পরই সবচেয়ে প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। এডিবি বলছে, বাংলাদেশ ৩০ দেশের মধ্যে ২৬তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। এই তালিকায় শীর্ষে আছে তাইপে। এর পরেই সিঙ্গাপুরের অবস্থান। প্রবৃদ্ধিতে চতুর্থ শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। নতুন বছরের শুরুতে অর্থনীতি আরো বেগবান হবে বলে মনে করে এডিবি।

ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বৈশ্বিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিটেন্সের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। দেশের ব্যবসায়ীরা আত্মবিশ্বাসী। অচিরেই এর সুফল ভোগ করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নিয়ে এমন আশা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আবাসিক প্রতিনিধি রগনার গুডমান্ডসন। আইএমএফ কান্ট্রি ফোকাসে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ‘হেলপিং বাংলাদেশ রিকভার ফ্রম কোভিড-১৯’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে করোনা সংকট ঘিরে বাংলাদেশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এসব বিষয়ে কথা বলেন রগনার। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী ২০২০ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকবে, ২০২১ সালে তা আরো বেগবান হবে। এতে ওই বছর প্রবৃদ্ধি আবারো প্রায় ৬ শতাংশে ফিরবে। এটা ঠিক যে তা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কত দ্রুত পুনরুদ্ধার শুরু হয় তার ওপর।  স্ট্যান্ডার চার্টার্ড ব্যাংকের আশিয়ান অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড লি জানান, এখন বাংলাদেশ ব্যবসায় অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠেছে। আশিয়ান ও দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। মানুষের মনে আস্থা ফিরেছে। কেনাবেচা বেড়েছে। এসবের ওপর ভর করেই অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গবেষণার প্রধান দিব্য দেবেশ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক ভালো রয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশের চিন্তার কিছু নেই। অন্যদিকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ কম। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি স্বস্তির খবর।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন

ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া আর্থিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ফলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে আভাস দিয়েছে তারা। সংস্থাটি বলছে, উৎপাদনের গতি বাড়ায় এবং বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতা দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২০ হালনাগাদ’ প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অতি সম্প্রতি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক। বিশেষজ্ঞের মতে, সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের খুব ছোট একটি অংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সরকার গত ২৬ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর পোশাক খাত প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকা কারখানাগুলো আবার ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘যথাযথ অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ভালোভাবে সংকট সামাল দিয়েছে । তিনি বলেন, ‘রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক এবং আশা করছি অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানো হবে টেকসই, যা প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।’

ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রযাত্রা

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন কর্মী সরবরাহে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে নিয়মিত কাজ করছে ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার। আর মোট নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ফ্রিল্যান্সাররা ১০ কোটি ডলার আয় করে থাকেন। একেক দেশ একেক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই পেশা নিয়ে কাজ করছে। যেমন ভারতীয় ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। আর বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত সেলস ও মার্কেটিং সেবায় পারদর্শী। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার। প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী মনের মতো চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে আছে। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে খুব সহজেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এতে করে তারা শুধু নিজের জীবিকাই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও সমর্থ হবে, যা ‘নতুন বাংলাদেশ’র অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষিত নারীকে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তাদের জন্যও ফ্রিল্যান্সিং দারুণ সুযোগ। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন পুরুষের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। আর নারীদের অংশগ্রহণে এই সেক্টর আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads