ঘুরে আসুন ফেনীর কাজীরবাগ ইকোপার্ক

ছবি সংগৃহিত

ভ্রমণ

ঘুরে আসুন ফেনীর কাজীরবাগ ইকোপার্ক

  • সাহিদা সাম্য লীনা
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

মফস্বল শহরে বিনোদন বলতে ৪-৫ বছর আগেও ভালো কোনো স্পট আশা করা যেত না। সবাই ছুটত ঢাকা-চিটাগং। বিত্তবানরা ছুটেন দেশের বাইরে- নেপাল, ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড। এখন গ্লোবালাইজেশনের সময়ে একটা পরিবর্তন এসেছে সর্বত্র। জেলা শহর ফেনীর কাজীরবাগ ইউনিয়নে এ বছরই একটি বিনোদন স্পট তৈরি হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে। নাম দেওয়া হয়েছে কাজীরবাগ ইকোপার্ক। এর বাস্তবায়ন সময় ছিল ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।

ইকোপার্কটি জেলার সামাজিক বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে। শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সুনসান পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১৩ আগস্ট  উদ্বোধনের পর সর্বসাধারণ ছুটে এসেছেন ক্ষণিকের প্রাণের স্পন্দন ও অবসর নিতে। যান্ত্রিক কোলাহল ফেলে ও বিভিন্ন ছুটির দিন পরিবার নিয়ে উপভোগের তেমন কোনো স্থান ছিল না। জেলাতে বসবাসকারী ও চাকরির কারণে নানামুখী মানুষের বাস। অনেকেই আছেন ঈদ, পূজায় বাড়ি যান না। আত্মীয়স্বজনও থাকে না শহরে। তাদের জন্য ও ভ্রমণপিয়াসু মানুষের নিমিত্তে এই ইকোপার্ক! এটি জনসাধারণের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টিই একটি প্রকল্প মাত্র।

ফেনী ট্রাংক রোড থেকে সদর হাসপাতাল মোড়, সালাউদ্দিন মোড় থেকে সিএনজি রিকশা ও সেখানে পৌঁছে অটো, সিএনজি, রিকশাযোগে যেতে পারেন ফেনী ও আশপাশের এলাকার লোকজন। লোকেশন সহজ হওয়াতে ও চর্তুমুখী রাস্তা আসা- যাওয়া সুবিধার কারণে মহিপাল, চৌদ্দগ্রাম, মিরসরাই থেকেও লোকজন প্রতিনিয়ত ভিড় করছে। তবে এটি পরশুরাম যাওয়ার পথে পড়ে। সেখান থেকে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ারও সংযোগস্থল।

পার্কে দেখা গেল নানা বয়সী মানুষ। ছোট-বড়, স্কুল, কলেজপড়ুয়াদেরও দেখা গেল। জানতে চাইলে তারা জানান, বাসায় যাওয়ার আগে ক্লাস শেষে আমরা এখানে দেখতে এলাম। পরে পরিবারের সবাই মিলে আসব। পার্কের এক পাশে বড় একটি পুকুর, তার মাঝখানে ঝরনার স্রোতধারা, পাশে রাজহাঁসের বিচরণ দৃশ্যটাকে অন্যরকম করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ ছোট্ট চিড়িয়াখানারও ব্যবস্থা রেখেছেন। ভারতীয় ময়ূর, লাভ বার্ড, ব্লু অ্যান্ড গোল্ড মেকাউ নামে পাখি যা আনা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক গাজীপুর থেকে। সাইনবোর্ডে পাখির নাম ও বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া আছে। বাচ্চাদের সেসব দেখে আনন্দ যেন সয় না। পঞ্চাশোর্ধ নারীকে দেখা গেল, ঘুরে ঘুরে মজা করে সব দেখছে পাখি, খরগোশ, বানর। বলেন তিনি এসব কখনো দেখেননি। শুনেছেন। ছেলের বউ, নাতিকে নিয়ে এসেছেন। ছেলে বিদেশ থাকে। ছেলে শুনেছে ইকোপার্ক হয়েছে, ছেলেই বলেছে ঘুরে আসতে। 

পার্কে ঢুকতেই চোখ ধাঁধানো ঘাস কেটে লেখা স্বাগতম শব্দটি। লাল, নীল, সাদা  পাথরে শোভিত কারুকার্যে যে কারোই ভালো লাগে। জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ফেনীর মানুষের বিনোদন চাহিদা কিছুটা হলেও এর মাধ্যমে পূর্ণ হচ্ছে। খবর পাচ্ছি অনেকেই সেখানে ঘুরে এসেছেন। পরিবার নিয়ে সবাই একটু ঘোরার স্বাদ ও বিনোদন উপভোগ করতে পারছেন। এ ছাড়া ৯২৮ বর্গকিলোমিটারের জেলাতে অর্থনৈতিক একটি গতিও আনবে এই ইকোপার্ক!

সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা তপন কুমার দেবনাথ জানান, কাজিরবাগ গ্রামে ৪ একর ৭৫ শতক জমির ওপর ইকোপার্কটি তৈরি হয়েছে। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের বাইরে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকোপার্কের  ভেতরে একটি দ্বিতল রেস্টহাউস রাখা হয়েছে। এটা মূলত পরিদর্শন হাউজ। কর্মকর্তাদের জন্য। পরবর্তী সময়ে আরো কিছু সংযোজন আমরা করব। একটি মিউজিয়াম, নাগরদোলা, ট্রেন ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপিত হবে। এখানে মানুষ ঘুরতে এলে বিভিন্ন গাছের সঙ্গেও পরিচিতি পাবে। সেই ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি। সেই অর্থে ইকোপার্কই নয় শুধু। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও চারা সংরক্ষণ আমরা করছি। একটি খেলার মাঠও রয়েছে।

পার্কে রয়েছে- দর্শনার্থীদের জন্য বসার বেঞ্চ, ছায়ার জন্য দেওয়া হয়েছে ব্যাঙের  ছাতা, কুমির গাছে অজগর সাপ, ঈগল পাখি, পাখির বাসা ও তার ডিমের ভাস্কর্য।  শিশুদের খেলার জন্য ২-১ সরঞ্জাম, পুকুরে নৌকা, আশপাশে বিভিন্ন রকমারি ফুল। পার্কে ঢুকতেই দেখা যায়, নানা ধরনের ফুলের বাগান, হাঁটার জন্য পাকা সড়ক, পথের পাশে ও বাগানের আশপাশে বসে গল্প করার জন্য ২০টি বেঞ্চ, শিশুদের মেরি গো রাউন্ড, স্নিপার, ঢেঁকি, দোলনা, ব্যাঙের ছাতাসহ আনন্দ উপভোগের নানা সুযোগ রয়েছে। পার্কের মাঝখানে আছে ৫০ ফুট উঁচু একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারে ওঠে দর্শনার্থীরা আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া পার্কের ভেতরেই দর্শনার্থীদের খাওয়া ও নাশতার জন্য রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ ও ওয়াশরুম।

পার্কের চারদিকে নানা প্রজাতির গাছের চারা ও উদ্ভিদ রয়েছে, যারা গাছ লাগাতে ভালোবাসেন ও প্রয়োজন কেনার তারাও এখান হতে কিনতে পারবেন ঘুরতে এসে। সেখানে কর্মরত স্টাপদের সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় গাছের চারাগুলো বেড়ে উঠছে।

যেসব শিশুর খেলার প্রতি আগ্রহ ও ঘরে কান্নাকাটি করে তাদের নিয়ে এসেছেন কয়েকজন মা গ্রুপ। মায়েরা বসে থেকে প্রতিদিন তাদের খেলিয়ে নিয়ে যান বলে জানালেন তারা। এভাবে কত দিন আনবেন বললে জানালেন-ওরা যত দিন পর্যন্ত বিরক্ত না হবে এখানে আসতে তত দিন আনবো। খেলাধুলার জন্য মাঠ আছে, নীরব পরিবেশ। শিখতেও পারছে। এখান থেকে খেলে ওরা বাসায় গিয়ে পড়াশোনাও করতে চায়। তা ছাড়া টিকিট ছোট শিশুদের জন্য পাঁচ টাকা। বড়দের জন্য ২০ টাকা। যোগাযোগ ভালো শহর থেকে। গাড়ি পাচ্ছি। আমাদেরও সময় কাটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads