দেশের কৃষকরা যখন বোরো ধান চাষ করে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন ঠিক সেই সময়ে শীতকালীন ফসল হিসেবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন গ্রীষ্মকালেরও দিনাজপুরে পাওয়া যাচ্ছে। অসময়ে চাষ ফুলকপি ও বাধাকপি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। আর গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি পেয়ে সাধারণ ক্রেতারাও খুশি। শীতকালীন ফসল গ্রীষ্মকালে চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হলেও আগামীতে অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আগ্রহী চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এই গ্রামের বেশির ভাগ কৃষক পাকা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকের জমিতে দেখা গেল সবুজ রঙ্গের ক্ষেত। সবুজ রঙ্গের হওয়ার কারণ একমাত্র ক্ষেতটিতে চাষ করা হয়েছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। সারাদেশে শীতকালীন প্রধান ফসলগুলোর অন্যতম ফুলকপি ও বাঁধাকপি। তবে বীরগঞ্জ উপজেলায় গ্রীষ্মকালেও পাওয়া যাচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। এই গ্রামের আব্দুল মালেকসহ অনেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। সারাদেশে যখন ধান চাষ করে করে কৃষকরা মাথায় দিয়েছেন কিন্তু বীরগঞ্জের কিছু কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি পাওয়ায় অনেক ক্রেতা বেশি দাম হলেও কিনছেন। শীতকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন গ্রীষ্মকালেও পাওয়ায় অনেক ক্রেতা খুশি হচ্ছেন। ভবিষ্যতে দিনাজপুর জেলার আশপাশের উপজেলা গুলোতেও ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ ছড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। অপরদিকে গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহী হলে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
দলুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক জানান, তিনি এবছর উপজেলা একটি কৃষি খামারের সাড়ে ৩ একর জমি চুক্তিতে লীজ নেন। সেই জমির কিছু অংশে ১১১ জাতের ফুলকপি ও কুইকার জাতের বাঁধাকপি বীজ রোপন করে। চলতি বছরের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে তিনি বীজতলা তৈরী শেষে চারা তুলে ওই জমির অন্য অংশগুলোতে রোপন করে। তার সাড়ে ৩ একর জমিতে বর্তমানে প্রায় ৭৫ হাজার চারা রয়েছে। চারা রোপনের ৫০ দিন পর থেকে তার ক্ষেত থেকে পরিপক্ক ফুলকপি ও বাঁধাকপি উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে পবিত্র মাহে রমজান মাস হওয়ায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তিনি এবছর বোরো ধানের পরিবর্তে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। আগামীতেও তিনি চাষ করবেন। প্রায় ৭৫ হাজার পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারা রোপনের পর ৫০ হাজার পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় দেড় লাখ টাকায় বাজারে বিক্রি করেছেন। শীতকালীন ফসল গ্রীষ্মকালে পাওয়া নিয়ে আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যতে বীরগঞ্জের বাইরে আশপাশের উপজেলাগুলোতেও গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দলুয়া গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন, ফকির উদ্দীন জানান, আমরাও আগামী বছর থেকে গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করব। ধান চাষ করে আমরা পথে বসেছি। ভবিষ্যতে আর ধান চাষ করার চিন্তা নেই আমাদের। যেই ফসলে আমাদের বেশি লাভ হবে সেই ফসল আমরা চাষ করব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে। যা গত গ্রীষ্ম মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুন হয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শীতকালীন ফসল হওয়ায় গ্রীষ্মকালে চাষ করে অনেক কঠিন। আবহাওয়া খারাপ বা গ্রীষ্মকালে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারার অনেক ক্ষতি হয়। তারপরেও সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশকসহ নিয়মিত পরিচর্যা করলে ক্ষতির বদলে উপকার পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে বীরগঞ্জে গ্রীষ্মকালে কিছুভাবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হলেও দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হবে। যদি অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ সাফল্য আনে তাহলে চুড়ান্তভাবে কৃষকদের নিয়ে চাষ করা হবে। তবে বীরগঞ্জের কোন কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহী হন তাহলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে।