গ্রামীণ সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর

রুবেল মিয়া নাহিদ

ভ্রমণ

গ্রামীণ সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর

  • বাংলাদেশের খবর
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই, ২০২২

কাঁচা রাস্তার দু-ধারে সবুজ গাছের সারি। রাস্তার দুধারে একের পর এক মাটির ঘর। এ যেন এক অন্য অনুভূতি। তবে অনুভূতি আজো ছিটেফোঁটা পাওয়া যাবে দেশের কিছু অঞ্চলে। পুরনো ঐতিহ্যের নিদর্শন গ্রাম বাংলার মাটির ঘর। গ্রামীণ সংস্কৃতির জীবন্ত জাদুঘর এই মাটির ঘর। রাস্তা কাঁচা, প্রতিটি বাড়ি মাটির। গত পাঁচ থেকে ছয় দশক আগেও বাংলাদেশ নানা অঞ্চলে এ দৃশ্য দেখা যেত হরহামেশা। নারায়ণগঞ্জের মহজমপুর, ললাটি, নানাখি, রূপগঞ্জ, বেরাইদা, গাউছিয়া, ধুপতারা, কালিবাড়ি, মাধবদী, সাভার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহীর তানোর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, নাটোরের সিংড়া, রংপুরের মধুপুর ও যশোরের মনিরামপুর গ্রামে দ্বিতল মাটির ঘর এখনো টিকে আছে। ঘরগুলো দেখতে মনোরম। পরিবেশবান্ধব ঘর বলে অনেকে বিমুগ্ধও হন।

মাটি, খড় ও পানি ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরিতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে মাটির দেয়াল তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। স্বাভাবিকভাবে মাটির তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৫ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়ি সম্পন্ন করতে সময় লাগে প্রায় ৯ মাস। মাটিঘর গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘর। তবে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ও পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান এখনো অনেক গ্রাম। মাটির বাড়ির ভিতরে চৈত্র মাসের প্রখর দাবদাহেও থাকত শীতল হাওয়া। আবার প্রচণ্ড শীতের মাঝেও উষ্ণতা অনুভব করতাম আমরা।  ‘এসি’ নামে পরিচিত মাটি দ্বারা তৈরি বাড়ি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সেইসব মাটির বাড়ি। তবে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নিমাইদীঘি গ্রামে রয়েছে ৪৩ বছর আগে বানানো সাত কক্ষের তিনতলা একটি মাটির বাড়ি। আজো টিকে আছে বাড়িটি।

এমন আরেকটি গল্প আছে নওগাঁর মহাদেবপুরের আলিপুর গ্রামে। ১৯৮৬ সালে এখানে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় ১০৮ কক্ষের একটি বাড়ি। এর ৯৬টি কক্ষ বড়, ১২টি ছোট কক্ষ। বাড়িটি তিন বিঘা জমির ওপর নির্মিত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফিট, প্রস্থ ১০০ ফিট। এ ছাড়াও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এখনো চোখে পড়ে গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী সারি সারি হাজারো মাটির ঘর। মাটির ঘর গ্রামের মানুষের কাছে এখনো যেন শান্তির নীড়। অনেকে মাটির বাড়িটি করেছেন শখের বসে। নিজের চিন্তায় ডিজাইন ও হাতে নকশা করেন। বাড়িতে যেই আসুক না কেন একটু সবার নজর কাড়ে এই বাড়ি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads