সোনালী আঁশ পাটের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। পাটচাষে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আগের মতো পাট চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। উপজেলা পাট অধিদপ্তরের সুষ্ঠ তদারকিতে বরিশালের গৌরনদীতে চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাট কাটা, জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাদের যেন দম ফেলার সময় নেই। পাটের ফলন ও দাম ভালো থাকায় চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে স্বপ্ন পূরণের হাসি।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এ উপজেলায় ৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এবার সেখান থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , চলতি পাট মৌসুমে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্পসারন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী উপজেলা পাট অধিদপ্তর ১ হাজার ১ শত জন পাট চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে অনেক কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পাট বীজ বপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা দেশি, তোষা, মেশতা, ববি-১ ও ৯৮,৯৭ জাতের পাটের আবাদ করেছেন। তবে উন্নত ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ ভালো হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম-গঞ্জে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। নদী-নালা খাল-বিলে পানি কম থাকায় পাট জাগ দিতে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বার্থি গ্রামের পাট চাষী মোঃ ফারুক মোল্লা (৫৯)জানান,পাটের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু খালে পানি কম থাকায় পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে এবং পানি কম থাকার কারনে পাটের আঁশের রং পরিবর্তন হচ্ছে। পুরুষরা খাল থেকে জাগ দেওয়া পাট রাস্তার পাশে রাখেন। সেখান থেকে জাগ দেওয়া পাট নিয়ে মহিলারা আঁশ ছাড়ান। আঁশ ছাড়ানোর কাজটা মুলত মহিলারা বেশি করেন। বার্থি গ্রামের আঁশ ছাড়ানো জন্য আশা আলেয়া বেগম, সেলিনা বেগম,রহিমা জানান, তিন আটা পাটের আঁশ ছাড়ালে এক আটা পাটকাঠি দিবেন। আমরা সারাদিনে ৯ থেকে ১২ আটা পাটের আঁশ সারাতে পারলে আমরা পাব ৩ থেকে ৪ আটা পাটকাঠি। বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী স্বার্ন আক্তার, সোহানা, জানান করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় পাটের আঁশ ছাড়াতে এসেছি। প্রতি বছরের ন্যায় পাটের ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১১ মন পাট পেয়েছে চাষিরা। বিঘা প্রতি জমি চাষ,সেচ,রাসায়ানিক সার প্রয়োগ,পাট কাটা,শুকানোসহ খরজ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার পাটের ফলন ভাল দাম ও বেশি হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হবে ৩/৪ গুন বেশি। গত বছর বিঘা প্রতি ৬/৭ মন পাট পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘা প্রতি ১০/১১ মন পাট পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। পাট শুকানোর পর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতি মন পাট ২ হাজার টাকা হতে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমে চাষিরা জমিতে পাট চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে। পাট ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে ¯হানীয় বাজারগুলো জমে উঠেছে।
গৌরনদী উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মুন মুন আক্তার বলেন, উপজেলা পাট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষনের কারনে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পাটের দামও ভালো। পাট অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে পাট চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। আমি চাষিদের যাবতীয় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।