বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আতঙ্ক সৃষ্টি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাড়িতে না আসতে হুমকি দিচ্ছে বলে বিএনপি নেতা -কর্মী তাদের স্ত্রী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল বুধবার রাতে গৌরনদী উপজেলা সদরের দক্ষিণ বিজয়পুর মহল্লায় এ হুমকির ঘটনা ঘটে।
গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জহির সাজ্জাদ হান্নান শরীফ অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলা মামলার কারনে দীর্ঘদিন আমি এলাকাছাড়া। বাড়িতে আমার স্ত্রী আল হেলাল দাখির মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার (৩৫) পুত্র সন্তানকে নিয়ে থাকেন। বুধবার দিবাগত রাত পোনে ৯টার দিকে ২৫ থেকে ৩০টি মোটর সাইকেলযোগে প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী বাড়ির দরজার কড়া নাড়ে। আমার পুত্র দরজা খুলতেই তারা আমার সন্ধান জানতে চান। আমি বাড়িতে নেই শুনে কতিপয় ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা-কর্মীরা আমার স্ত্রীকে জানান আগামি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে যেন বাড়িতে না আসে। আসলে পরিনতি খারাপ হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যা ‘। গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সভাপতি শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন অভিযোগ করেন, ‘কিছুদিন আগে ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা-কর্মীরা আমার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ঢুকে আমাকে কুপিয়ে জখম করে এবং আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যে মামলা দিয়ে পুলিশী হয়রানী করার কারণে আমি এলাকাছাড়া। আমার স্ত্রী শামীমা খানম শিশু কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে আমার ঘরের দরজার কড়া নাড়লে মেয়ে দরজা খুলে দেয়। এ সময় ৮-১০ জন যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঘরে ঢুকে আমাকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে তারা আমার স্ত্রীকে বলে ৩০ ডিসেম্বর স্বামী যেন বাড়িতে না আসে। আসলে তাকে মেরে ফেলা হব ‘।
স্বপনের স্ত্রী শামীমা জানান, বাড়িতে এক সঙ্গে এতগুলো মোটর সাইকেল ঢুকে পড়লে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আল হেলাল দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জামাত কর্মী আমীরুল ইসলাম শরীফের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার (৩০) বলেন, ‘রাত পোনে ৯টার দিকে ঘরের দরজা খোলা ছিল। এ সময় ৬-৭জন যুবক ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। তারা আমার স্বামীকে খুজতে থাকে। তিনি এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। তারা নিজেদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ পরিচয় দিয়ে আমার স্বামীকে বাড়ি ছাড়তে বলে এবং ৩০ তারিখের আগে যেন গৌরনদীতে ফিরে না আসে। আসলে পরিস্থিতি খারাপ হবে’।
বাড়িতে ২৫-৩০টি মোটর সাইকেল নিয়ে এক সঙ্গে ৫০-৬০ জন লোক ঢুকলে বাড়িতে নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পরে। যাওয়ার সময় কথার ব্যতিক্রম ঘটলে আবার আসবে বলে হুমকি দেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভূইয়া বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হানা ও হুমকির ঘটনায় কোনো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী জড়িত নাই। দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটাতে পারে’। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুব বলেন, ‘এ হেন কাজের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা নেতা-কর্মী জড়িত নাই। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইস্যু সৃষ্টি করতে জামাত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেরাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে’।
এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, ‘এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।