গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবীতে ৬ষ্ঠ দিনের মত বিরতিহীন ভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভিসির পদত্যাগের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও মানবন্ধন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে, প্রাণ নাশের হুমকী দেয়ায় থানার সাধারন ডায়েরী করেছেন পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর মো: হুমায়ূন কবীর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে জানাগেছে, সকালে ও দুপুরে বৃষ্টি হলেও প্রতিদিনের আজ মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি আন্দোলনে কোন প্রভাব ফেরতে পারেনি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আন্দোলন স্থানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ভিসি বিরোধী শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। এসময় আন্দোলনকারীরা ভিসির নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারীর লেখা বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শন করে। আন্দোলন চলাকালে সীমান্ত নামে এ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরা না হওয়ায় দোষীদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোললরত শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বৈরাচারী কায়দায় এই খোন্দকার নাসিরউদ্দিন মুক্তমনা শিক্ষক ও সমস্ত শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রেখে শিক্ষার পরিবেশ তীব্রভাবে কলুষিত করে যাচ্ছেন। যা সমসাময়িক দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি প্রতিনিয়ত। সবাই আজ জেগেছে, সবাই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ চাই। আর এই ভিসি নাসিরউদ্দিন এর পদত্যাগই এর একমাত্র সমাধান। তাই আমাদের এক দফা এক দাবী এই ভিসির পদত্যাগ।
প্রেস ব্রিফিং এ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এমএসসি গনিত বিভাগের ছাত্র মোঃ আল গালিব। এ সময় আইন বিভাগের ছাত্র শফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল রাফি, নাহিদ মোল্যা, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী রেহেনুমা তাবাসুম প্রমূখ উপস্তিত ছিলেন।
এদিকে, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন বশেমুরবিপ্রবি’র পদত্যাগী সহকারি প্রক্টর মোঃ হুমায়ূন কবীর। সোমবার রাতে তিনি এ সাধারন ডায়েরী করেন। মোঃ হুমায়ুন কবীর গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সাধারন ডায়েরীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর সাধারন ছাত্র-ছাত্রীর উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকর্তৃক হামলার প্রতিবাদে আমি সহকারি প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করি। এ জন্যে হুমায়ূন কবীর (Humazun kabir) নাম দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ফেইসবুক আইডি খুলে তার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উষ্কানিমূলক, চারিত্রিক ও মানহানীকর বিভিন্ন স্ট্যাস্টাস দিচ্ছে। অজ্ঞাতনামা (ভিসি পন্থি) ব্যক্তিরা উক্ত ফেইসবুক আইডি’র মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করছে। যাতে আমার সামাজিক ও পারিবারিক এবং শিক্ষাকতা পেশায় সম্মানহানী হচ্ছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপন্থিরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে পেয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।
তিনি আরো জানান, আমি উক্ত বিষয় নিয়ে খুব সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। যে কোন সময় ভিসি পন্থীরা ফেইসবুক আইডি’র মাধ্যমে অপপ্রচার করে আমার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারন ডায়েরীভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রহিম খান তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার জন্য আহবান জানিয়ে নোটিশ দিয়েছেন।
সেখানে বলা হযেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জে বিভিন্ন দাবি দাওয়ার প্রেক্ষিতে অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে একদল সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় ও হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী অথবা উপযুক্ত তথ্য প্রদান করতে পারে এমন ব্যক্তিবর্গকে তথ্য (যেমন-ভিডিও, অডিও বা অনুরূপ কিছু) আগামী ২ দিনের মধ্যে (২৪/০৯/২০১৯ ও ২৫/০৯/২০১৯) প্রদান করে তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিযেছেন।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যে সব দাবী দাওয়া ছিলো সেগুলো ইতিমধ্যে মেনে নেয়া হযেছে। এটি একটি সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কোন সেশনজট নেই। এখানে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং ১ জানুযারী ক্লাস শুরু করা হয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে নিজেদের ক্ষতি করছে। এ সময় এখানে মাদকের ব্যবহার ছিলো। আমি আসার পর মাদকমুক্ত করেছি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহি করে। এর প্রেক্ষিতে ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি এবং নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা।