গোপালগঞ্জে বিরল প্রজাতির চারটি গন্ধগোকুলের বাচ্চা উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। পরে তা গোপালগঞ্জ বন বিভাগের কাছে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার ঘোষেরচর মধ্যপাড়া থেকে ওই গন্ধগোকুলের বাচ্চা উদ্ধার করা হয়। প্রথম দিকে এগুলো মেছো বাঘ বলে ধারণা করা হলেও পরবর্তীতে এগুলো গন্ধগোকুলের বাচ্চা বলে জানায় খুলনা বন্যপ্রাণী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ঘোষেরচর মধ্যপাড়া গ্রামের একটি তাল গাছে ভিন্ন সুরের প্রাণীর ডাক শুনতে পায় অপুর্ব দাসসহ কয়েকজন কিশোর। পরে ৫/৬ জন বন্ধু মিলে ওই তাল গাছ থেকে ৪টি গন্ধগোকুলের বাচ্চাকে নিচে নামিয়ে আনে। এ সময় প্রাণীগুলোকে দেখার জন্য স্থানীয়রা ভীড় জমায়। পরে সংবাদ পেয়ে গোপালগঞ্জ বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চারটি গন্ধগোকুলের বাচ্চা উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পরে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বন্যপ্রানী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে ওই গন্ধগোকুলের বাচ্চাগুলো হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার হওয়া প্রাণী গন্ধগোকুলের বৈজ্ঞানিক নাম এশিয়ান প্লাম সিভিট। এসব প্রাণী মুলত নিশাচর প্রাণী। এরা রাতের বেলায় খাবার সংগ্রহ করে থাকে। বিভিন্ন পোকা-মাকর খেয়ে জীবন ধারন করে।
কিশোর অপূর্ব দাস বলেন, আমরা ঘোষেরচর মধ্যপাড়ার একটি সরকারী হালটের কাছে খেলতে ছিলাম। এ সময় একটি তালগাছের উপর থেকে ভিন্ন সুরের ডাক শুনতে পাই। পরে কয়েকজন বন্ধু মিলে তাল গাছে উঠে ওই প্রাণী ৪টিকে নামিয়ে নিয়ে আসি।
বয়োবৃদ্ধ রহিম মুন্সী বলেন, এক সময় গ্রামে গন্ধগোকুলের দেখা মিলত। কিন্তু এখন বন আর জঙ্গল না থাকায় গন্ধগোকুল তেমন একটা চোখে পড়ে না।
গোপালগঞ্জ বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, উদ্ধার হওয়ায় প্রাণীগুলো গন্ধগোকুল বলে জানায় খুলনা বন্যপ্রানী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্র। খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা থেকে ৬ সদস্যের একটি দল উদ্ধার হওয়া বাচ্চাগুলো নিতে গোপালগঞ্জে আসেন। ইতিমধ্যে আমারা খুলনা বন্যপ্রাণী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে প্রাণীগুলোকে হস্তান্তর করেছে।
খুলনা বন্যপ্রাণী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের ফরেস্টার মো. মামুন আর রশীদ জানান, উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলো গন্ধগোকুলের বাচ্চা। বাচ্চাগুলো বয়স ২৫ থেকে ৩০ দিন হবে। এগুলো খুলনা বন্যপ্রানী রক্ষা, উদ্ধার ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে নিয়ে লালন পালন করে বড় করার পর উপযুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে। গন্ধগোকুল একটি নিশাচর প্রাণী। এরা জনবহুল এলাকার তালসহ বিভিন্ন গাছে থাকে। রাতের বেলা আহার শিকারে বের হয়। সাধারণত কবুতর ও মুরগীর বাচ্চা শিকার করে এরা বেঁচে থাকে।
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. এম.এ সত্তার বলেন, গন্ধগোকুল বিলুপ্তি হবার অন্যতম কারণ বন জঙ্গল কেটে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে খাবার সঙ্কট ও বংশ বৃদ্ধি করার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা। সেই সঙ্গে জমিতে কিটনাশক প্রয়োগ ও এদেরকে নির্বিচারে হত্যা করাও কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। তবে বন জঙ্গলের বৃদ্ধি করা এবং কিটনাশক প্রয়োগ আর হত্যা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্ট করা গেলে বিলুপ্ত প্রজাতির এসব প্রাণী আবারো ফিরিয়ে আনা সম্ভব।