বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস্ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, গৃহশ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত, শ্রমিক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি এবং দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের সংগঠিত করতে আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুস্বাক্ষর করা জরুরি।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সহযোগিতায় ‘গৃহশ্রমিকদের শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিলস্-এর নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, এমপি। বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, এমপি, ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আব্দুল হান্নান, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর যুগ্ম সমন্বয়কারী শহিদুল্লাহ চৌধুরী, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, বাসস’র বাংলা বিভাগের প্রধান রুহুল গনি জ্যোতি, বাসস’র বার্তা সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আমানুর রহমান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
সভায় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, আইএলও কনভেনশন-১৮৯ যে সম্মেলনে গৃহীত হয়েছে সেখানে সভাপতি ছিল বাংলাদেশ। সে হিসেবে এ কনভেনশন অনুস্বাক্ষরে আমাদের দায়িত্ব বেশি। তিনি বলেন, গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই তাদের অধিকাংশ অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশেষ করে তাদের পরিচয়পত্র, মজুরি, কর্মঘণ্টা ও কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, গৃহশ্রমিকরা বেশিরভাগই শিক্ষিত মানুষদের ধারাই নির্যাতিত হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সমাজের দর্পণ হিসেবে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
বিলস-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারা দেশে মোট ৫১ জন গৃহশ্রমিক নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে নিহত হয়েছে ১৭ জন। বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকের অবস্থা আরো করুণ। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল নারী শ্রমিক বিদেশে যান, যাদের বেশির ভাগই যায় গৃহশ্রমিক হিসেবে। ২০১৯ সালে শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ৬২ হাজার নারী শ্রমিক। শ্রমিক প্রেরণকারী এবং গ্রহণকারী কোনো দেশই আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থন না করায় এসব শ্রমিক কোথাও বিচার বা ক্ষতিপূরণ পায় না। এমনকি দাবিও করতে পারে না। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা অনুস্বাক্ষর করলে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও আমাদের যেসব নারীশ্রমিক গৃহশ্রমিক কাজ করেন তাদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।