গুণগত মান নিশ্চিতে  সংস্কারের তাগিদ

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিং

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

গুণগত মান নিশ্চিতে  সংস্কারের তাগিদ

# নির্বাচনী ইশতেহারে থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা # উদ্যোক্তা তৈরিতে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

১০ বছরে দেশের আর্থসামাজিক খাতে ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে। এ সময়ে বাজেটের আকার তিন গুণে উন্নীত হয়েছে। তবে বিভাজিত উন্নতির কারণে বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সামাজিক নিরাপত্তায় উন্নতি হয়েছে কেবল সংখ্যা ও পরিমাণের বিচারে। গুণগত মানের বিচারে আগের অবস্থানেই আছে অর্থনীতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংস্কার কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা গেছে। টেকসই ও গুণগত উন্নতি নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারে হাত দিতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র ও আগামী নির্বাচনের ভাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সিপিডি। অর্থনীতির গুণগত মান উন্নয়নে পদক্ষেপের বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কার্যকর প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানে। তা ছাড়া ইশতেহারে অযাচিত প্রতিশ্রুতি না দিয়ে প্রতিশ্রুতি কীভাবে পূরণ করা হবে, প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের উৎস কী হবে, এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ইশতেহারে রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান। প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রাখেন অপর সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা বিভাগের পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো ড. তওফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে ১০ বছরে অর্থনীতির রূপান্তরের বিভিন্ন চালচিত্র তুলে ধরেন মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ সময়ে বাজেটের আকার তিন গুণ বাড়লেও বাস্তবায়নের গুণগত মান বাড়েনি। মোট বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের হার মাঝের কয়েক বছর বাড়লেও এখন কমে আসছে। বাজেট বাস্তবায়নের সফলতা হিসাব করা হয় অর্থ ব্যয়ের ভিত্তিতে। উন্নয়ন ব্যয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সঙ্গে অর্থ বিভাগের তথ্যের ফারাক বাড়ছে। বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ শতাংশ অর্থ নেওয়া হলেও এখন তা সাড়ে ৬১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ ধরনের অর্থায়ন ভবিষ্যতে ঋণের পরিমাণ আরো বাড়াতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ২০ বছরের মধ্যে বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্য প্রথমবারের মতো নেতিবাচক অবস্থায় এসেছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) মিয়ানমারে ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হলেও বাংলাদেশে তা ২০০ কোটি ডলারের ঘরেই স্থির আছে। বিদেশি ঋণের ছাড় ভালো অবস্থায় থাকলেও চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো দ্বিপক্ষীয় ঋণে সুদের হার বেশি। প্রবাসী আয় প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। এ অবস্থায় আমদানি কমিয়ে বিদেশি লেনদেনে ভারসাম্য আনা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে রফতানি বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

সরকারি খাতে ১ টাকা বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ অন্তত চার টাকা বেড়ে যাওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, জিডিপির চার শতাংশ থেকে সরকারি বিনিয়োগ আট শতাংশে উঠলেও বেসরকারি বিনিয়োগ ১০ বছরে ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশে। বিনিয়োগের উৎকর্ষ নিশ্চিত হলে এ পরিমাণ বিনিয়োগে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি খাতে বড় প্রতিষ্ঠান সহজেই ঋণ পাচ্ছে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান। মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। তা ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে অনলাইন, ই-কমার্সের মতো ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, শিক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্যোক্তা তৈরির মতো উপযোগী করে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অর্থনীতির ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে। জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগের ফলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বিপুল বিনিয়োগ এসেছে। এক কথায় দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। তবে অর্থনীতির এই উন্নতি নিষ্কলুষ নয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগত অবনমন হয়েছে। বিভাজিতভাবে বৈষম্যের ধারা দ্রুততম হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান না থাকায় বৈষম্য বেড়েছে। রাজনীতির মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা কমেছে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলছে না। এটা উদ্বেগের বিষয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক দর্শন প্রায় সমান। পার্থক্য কেবল কী পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এ বিষয়ে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধে বলেন, অর্থনীতির গতি বাড়াতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরিতে শ্রমঘন শিল্পায়ন প্রাধান্য দিতে হবে। রফতানি বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের জন্য শিল্পায়ন প্রয়োজন। কৃষিপণ্যের প্রণোদনা দিতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন ঘটাতে হবে। কৃষিতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। লাইভস্টক ও ফিশারিতে সম্ভাবনা তৈরি করে কাজে লাগাতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads