গাজর চাষে তিনগুণ লাভ!

উৎপাদন খরচের চেয়ে তিনগুণ লাভ পাওয়া যায় গাজর আবাদে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

গাজর চাষে তিনগুণ লাভ!

  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুজন সেন, শেরপুর

গাজর আবাদে স্বল্প সময় আর নামমাত্র শ্রমে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কৃষকদের দাবি, উৎপাদন খরচের চেয়ে তিনগুণ লাভ পাওয়া যায় গাজর আবাদে। উৎপাদন বেশি এবং ভালো দাম পাওয়ায় শেরপুরের সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী- এই পাঁচ উপজেলায় গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার জেলার প্রায় সব এলাকায় স্থানীয় চাহিদা মেটাতে কৃষকরা গাজর চাষ করেছেন। তবে নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর এলাকার শামীম আহমেদ ছয় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ করেছেন। কৃষকরা জানান, উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা আশাতীত বৃদ্ধি পাবে। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, গাজর সাধারণত ভাদ্র মাসের শুরু থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। এটি ৯০ দিনের ফসল। ৯০ দিনের মধ্যে গাজর চাষ করে কৃষকরা যতটা লাভবান হন, অন্য কোনো ফসল আবাদে তা কল্পনাও করা যায় না। তাই দিন দিন গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে। এ সম্পর্কে কৃৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, গাজর একটি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি। সাধারণত প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১২ টন গাজর উৎপাদন হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে কৃষকরা গাজর উত্তোলন শুরু করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষে লাভ বেশি, প্রায় তিনগুণ লাভ পাওয়া যায়। তাই যে কেউ গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

কৃষক শামীম আহমেদ বলেন, দেড় যুগ আগেও এলাকার অনেকে গাজর সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। কিন্তু এখন গাজর সবার কাছে একটি অতি পরিচিত সবজি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ২০১৬ সালে প্রথমে ছয় শতাংশ জমিতে গাজরের আবাদ করে ভালো ফলন এবং দাম পান তিনি। পরের বছর থেকে তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষক গাজর চাষ শুরু করেন। নামমাত্র শ্রমে উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার কয়েকশ কৃষক ইতোমধ্যে গাজর চাষ করা শুরু করেছেন। সদর উপজেলার চরপক্ষীমারির কৃষক মোকছেদ আলী মাস্টার, খোরশেদ আলম, আলী হোসেনসহ অনেকেই জানান, তারা কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সামান্য পরিমাণে গাজরের আবাদ করে আসছেন।

বাণিজ্যিকভাবে গাজর উৎপাদনকারী চাষি শামীম হোসেন বলেন, প্রতিবিঘা জমি ১০ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে গাজর চাষ করেছেন তিনি। পতিত জমিকে গাজর চাষের উপযোগী করাসহ গাজর উৎপাদন তথা বিক্রি করার আগপর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে তার ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। শ্রীবরদীর ভায়াডাঙ্গা এলাকার গাজর চাষি রমিজ মিয়া বলেন, গাজর গাছের পাতা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই গাজর গাছের পাতা গবাদিপশুর খাবারের জন্য পশুর মালিকরা গাজর  তোলার পর পাতা নিয়ে যান। এতে শ্রমিক খরচ কিছুটা হলেও কম লাগছে বলে জানান এই কৃষক।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ ও কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় জেলায় কম জমিতে গাজরের আবাদ হয়। যে কারণে দাম ভালো থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামীতে গাজরের আবাদ বৃদ্ধি করতে পারলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য ফসলের মতো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads