টাঙ্গাইলের সখীপুরে গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক জীবন সংগ্রামী নারী। তার নাম যমুনা আক্তার (৩৫)। উপজেলার বহেড়া তৈল ইউনিয়নের আন্দি বাজার এলাকায় এক ছেলে, এক মেয়ে ও মাসহ চার সদস্যের সংসার তার। ২০১১ সালে স্বামীর অবহেলার কারণে সংসার ত্যাগ করে চরম হতাশা ও কষ্টে চলছিল তার সংসার। দরিদ্রতা ছিল সংসারের সর্বত্র। এমনকি আর্থিক সংকটের কারণে ছেলে শাকিল হাসান নাঈম (১৪) ও মেয়ে শ্রাবনীকে (১০) স্কুলেও পাঠাতে পারেননি তিনি। এক সময় তার মনে হয় এ কষ্টের বুঝি শেষ নেই। এরপর একটি পরামর্শে যাদু মন্ত্রের মতো যমুনা আক্তার খুঁজে পান স্বাচ্ছন্দে বেঁচে থাকার অবলম্বন। গরু-ছাগল পালন করে এখন তিনি বেশ স্বাবলম্বী। পরিবারেও নেই অভাব অনটন। ছেলে শাকিল এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
গতকাল সাহসী উদ্যোক্তা যমুনা আক্তার বাংলাদেশের খবরের এ প্রতিবেদককে তার দিনপরিবর্তনের গল্প শোনান।
তিনি জানান, ২০১২ সালের শেষের দিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সানোয়ার হোসেনের পরামর্শে দেশীয় জাতের ছাগল পালনের সিদ্ধান্ত নিই। একটি এনজিও থেকে মাত্র ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৪টি ছাগলের বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেন তিনি। দেশীয় জাতের ছাগল দ্রুত বাচ্চা দেয়। মাত্র এক থেকে দেড়বছরেই তার খামারে ৩০টা ছাগল হয়।পরে তিনি কয়েকটি ছাগল বিক্রি করে দু’টি বকনা কিনে গরু পালন শুরু করেন। এখন তার খামারে তিনটি গাভী, তিনি ষাড় ও চারটি বকনা গরু রয়েছে।গরুগুলো তারা যমুনা আক্তারের পরম মমতা আর যত্নে বেড়ে উঠছে। তাদের নিয়েই স্বপ্ন বুনছেন যমুনা আক্তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা আক্তার এবার গরুর জন্যে নতুন ঘর দিচ্ছেন। এ বছরই খামারে যুক্ত হবে উন্নত জাতের কয়েকটি গরু। নিজেদের থাকার জন্যও দিয়েছেন বেশ সাজানো গোছালো নতুন ঘর। গত কয়েক বছরে তিনি পাঁচ লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন। তাই সেই হতদরিদ্র যমুনা আক্তারই এখন লাখ পতি।
যমুনা আক্তার বলেন, দুঃসময়ে ওই একটি পরামর্শ আমার জীবনের মোড় ঘুরাই দিছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের স্যারেরা আমার খামারের জন্য নিয়মিত পরামর্শ ও ফ্রি ওষুধ দিছে। হাসপাতালের এখনকার বড় স্যারও (আবদুল জলিল) নিয়মিত খামারের খোঁজ খবর নেন;পরামর্শ ও ওষুধ দেন। যমুনা আরো বলেন, এখনো কিছু টাকা ঋণ রয়েছে। তবে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছি। কম সুদে সরকারি ঋণ পেলে আমাদের জন্য বেশি সুবিধা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসমত আলী বলেন, যমুনার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন ছাগল পালন শুরু করেছেন। সকলেই বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাআবদুল জলিল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সঠিক পদ্ধতিতে গবাদি পশুপালন করলে লোকসানের সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের পরামর্শে যমুনা আক্তার এখন স্বাবলম্বী। তিনি এলাকায় বেকারত্ব ও দরিদ্রতা দূরীকরণের মডেলও বটে। আমরা সবসময় এ রকম সাহসী উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানাই।