• রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫ | ১৬ চৈত্র ১৪৩১ | ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

গণবিকাশ সংস্থার দরিদ্রের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে

  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর, ২০২০

হোসনেয়ারা খাতুন

 

 

ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের এনজিও, সমিতি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যুগ যুগ ধরে ধনী ও দরিদ্ররা এসব সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আসছেন। বেশিরভাগ  সময় ধনীরা ঋণ নেন ব্যাংক থেকে আর দরিদ্ররা ঋণ নেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে।

গ্রাম এলাকার মানুষ স্বল্পশিক্ষিত ও অভাবী। অভাব যেমন তাদের লেগে থাকে তেমনি অভাবের এ সুযোগ নিয়ে তাদের বোকা বানানোও সহজ। গ্রামে এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। প্রতি বছরই দেখা যায় কিছু কিছু এনজিও সংস্থা ধান কাটার এই মৌসুমে গ্রামে এসে ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রামের মানুষদের অনুপ্রাণিত করে। ধান ঘরে তুলতে, গরুর থাকার জন্য গোয়াল ঘরটা মেরামত করার জন্য, অনেক সময় নিজেদের থাকার ঘর মেরামত করতেও দরিদ্ররা এসব সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। তবে পরিশোধ করতে গিয়ে পড়তে হয় তাদের জীবন-মরণ সমস্যায়।

সাধারণত সমিতি বা এনজিও ঋণ দেয় এবং একসময় সুদে-আসলে তা পরিশোধিতও করে নেয়। কিন্তু এবার ঘটল উল্টো কাণ্ড। সম্প্রতি গণবিকাশ সংস্থা নামে একটি সমিতি গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে। ৩ জন মহিলা এসে ২/৩ দিন ধরে তাদের টার্গেটিং গ্রামে টহল দেয়। মূলত গ্রামবাসীকে তাদের সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। তারা যত টাকাই ঋণ দিক না কেন দুই বছর পর টাকা পরিশোধের কথা বলে। তাদের শর্ত সদস্য হতে ২৫০ টাকা দিতে হবে এবং প্রত্যেক সদস্যকে ঋণ নেওয়ার আগে ৭৫০ টাকা দিতে হবে অর্থাৎ প্রতি মহল্লা বা পাড়ায় ১০/১৫ সদস্যের এই পরিবার থেকে তারা অগ্রিম সদস্য ফি ও সঞ্চয় নামক টাকা নিচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ দেবে সেই আশ্বাস দিয়ে।

আমার মা আমাকে এসে গণবিকাশ সংস্থার কথা জানালেন যে তিনি এই সমিতির সদস্য হয়ে এসেছেন। আমি শুনে মায়ের ওপর বিরাগভাজন হলাম আমাকে না জানিয়ে কেন সমিতিতে সদস্য হলেন। তা ছাড়া আমি আগেও নিষেধ করেছি যে, আর সমিতি থেকে টাকা ঋণ নেওয়া যাবে না। মা আমাকে পারিবারিক নানা সমস্যার কথা বলতে লাগলেন ও রাগ করলেন। আমি নিরুপায় হয়ে কিছু বললাম না। শুধু বললাম জানা নাই, শোনা নাই কোথা থেকে আসছে এই এনজিও, আর তুমি লোন নিতে টাকা দিয়ে আসলে! আমি কি বলেছি লোন নিয়ে আমাদের মুখে খাবার তুলে দাও! মা আর কিছু বললেন না। দুদিন পর গণবিকাশ সংস্থার লোক আবার এলো। সবার কাছ থেকে সঞ্চয়ী হিসেবে ৭৫০ টাকা নিল এবং এই টাকা ঋণের টাকা পরিশোধের পর ফেরত পাওয়া যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিল এবং শর্তও জুড়ে দিল ৭৫০ টাকা না দিলে কোনো সদস্য টাকা ঋণ নিতে পারবেন না। সবাই টাকা দিলেন। আমার মা তাদের বলেছিলেন সবাই ঋণের টাকা পাক পরের সপ্তাহে আমরা সঞ্চয়ের টাকা দেব ও ঋণ নেব। একথা শুনে তারা বলেন, পরের সপ্তাহে টাকা ঋণ দেওয়া যাবে না। আজই সবাইকে টাকা দিতে হবে এবং সবাইকে একসাথে আমরা এই সপ্তাহে ঋণ দেব। এ কথা শুনে মা তবুও টাকা দিলেন না। অন্য ১৪ জন সদস্য ৭৫০ টাকা দিলেন আর আগে সদস্য হতে ২৫০ দিয়েছিলেন। আমি বরাবরই  এই সমিতি নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। যেই ভয় সেই আশঙ্কা হয়েই গেল।

‘গণবিকাশ’ নামের এই সংস্থা দরিদ্রদের চোখে আঙুল দিয়ে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়ে গেল এবং তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। তাদের দেওয়া নামমাত্র পাস বইয়ের ওপরে দেওয়া নম্বরে কল গিয়েছিল তিন দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ সঞ্চয়ের টাকা নেওয়ার আগ পর্যন্ত। এখন আর তাদের ফোনে কল যাচ্ছে না। তারা একাধিক গ্রামে গিয়ে সমিতির মাধ্যমে টাকা দেওয়ার নামে এমন প্রতারণার নতুন পদ্ধতি ও কৌশল শুরু করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার কয়েকটা গ্রামে। সর্বোপরি, ঋণ দেওয়ার নামে সংস্থা খুলে গ্রামের সহজ-সরল ও বোকা মানুষের থেকে সঞ্চয়ী হিসেবে অগ্রিম টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং এসব বেনামি সংস্থা খোলার অপরাধে আইনের আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads