গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ সময় পরেও মুক্তির জন্য সামগ্রিক যুদ্ধ আজো শেষ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতরা এখনো নিঃশেষ হয়নি। তাদের ধারাবাহিকতায় নতুন শত্রু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে গড়তে তাকে মনে ধারণ করে আমাদের সঞ্জিবনী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে হবে। আমাদের আত্মস্থ করতে হবে আমরা কোথায় পৌঁছতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে নয়, সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মনে-প্রাণে ধারণ করা। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, মাদক ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার যে যুদ্ধ, তা আজো শেষ হয়নি। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া জড়িত ছিলেন অভিযোগ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, এ জন্য খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া আইনের দাবি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যেপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. সামাদ প্রমুখ।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তিনি সর্বপ্রথম বলেছিলেন, ‘বাঙালির ভালোবাসার ঋণ আমি বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করে যাব’। ১৯৭৫ সালে তিনিসহ তার গোটা পরিবার রক্ত দিয়ে বাঙালির ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী শাসকরা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন শাসক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের উৎসাহ দিয়েছিলেন। এ জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলায় বলা হয়েছে ‘জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী, রাষ্ট্র দখলকারী তস্কর’।
সাংবিধানিকভাবে দেশকে কোনো বিশেষ ধর্মের রাষ্ট্র করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের দেশ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যুক্ত করেছেন কোনো বিশেষ ধর্মের ব্যক্তি আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। সবার জন্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা এক থাকবে। ৭২-এর সংবিধানের ধারণা তিনি পুনরায় প্রতিস্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছিলন খালেদা জিয়া ও তার সরকার মিলে। সরকারপ্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া আইনের দাবি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর দেশে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সে সময়ের বাংলাদেশের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাইতে হলে যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে তাদের নিয়ে স্পষ্ট কথা বলতে হবে। শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে দুঃসাহস দেখিয়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার সব অপচেষ্টা প্রতিহত করেছেন এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সেটাকে দমন করেছেন। সম্প্রীতির বাংলাদেশে যে ফাটল ধরেছিল, যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই বিষবাষ্প এখনো শেষ হয়নি। এই বিষবাষ্প দূর করতে সবাই মিলে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনের বাঙালিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।





