কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা গেছেে, কেবিন ব্লক বিল্ডিং এর ৬১২ নম্বর কেবিনে খালেদা জিয়াকে রাখা হবে। এছাড়াও ৬১১ নম্বর কেবিনটিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তায় গাড়িরবহরে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বহরে র্যাব, চকবাজার থানার ওসি, লালবাগ জোনের ওসি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি ছিল।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করানোকে কেন্দ্র হাসপাতালটির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার কেবিনের আশপাশে নতুন সিসিটিভিও লাগানো হয়েছে।
আজ সকালে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বেলা ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনে কারা কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। হাসপাতালে ভর্তির পর দ্রুততম সময়ে তার চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে মানসম্মত চিকিৎসা দিতেও বলা হয়েছে বোর্ডকে।
নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আগে সরকার যে মেডিকেল গঠন করেছিল সেখান থেকে বাদ পড়বেন তিন সদস্য। বোর্ডে আগের দুই সদস্য বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ থাকবেন।
বাদ পড়ছেন কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী। তাদের বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য করতে হবে যারা সরকারদলীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বিএনপিদলীয় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা সাবেক সদস্য ও সমর্থক নন।
বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার করা একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত।
আদেশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তার পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও টেকনোলজিস্ট নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন। আদালত বলেছেন, দর্শনার্থী সাক্ষাৎ করতে চাইলে কারাবিধি (জেল কোড) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যেহেতু আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেহেতু যথাযথ সম্মানের সঙ্গে তার মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে কারা কর্তৃপক্ষ ও বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যকে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে বাংলাদেশের বড় বড় চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবী কেউই দল-মতের ঊর্ধ্বে নন। তবু তারা পেশাদারত্ব নিয়ে কাজ করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল শুনানি করেন। সরকারপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও মোখলেসুর রহমান।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিট আবেদনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করার নির্দেশনাসহ তার চিকিৎসাসেবা-সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র দাখিলের নির্দেশনার আরজি জানানো হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





