মান্না দে, ফকিরহাট
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী। আঠারোবেকীর শাখা রূপসা-বাগেরহাট ভৈরব নদ সেগুলোর একটি অংশ। এটি রূপসা থেকে উৎপত্তি হয়ে ফকিরহাট উপজেলার বুক ঘেঁষে বাগেরহাটের যাত্রাপুর নামক স্থানে চিত্রা নদীতে মিলিত হয়েছে। চিংড়িঘের অধ্যুষিত এ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য নদটি হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম। জাতীয় নৌপথের মধ্যে অন্যতম। এ নদটি প্রাচীনকাল থেকে বহু মালামাল পরিবহনের সাক্ষী হয়ে ভূমিদস্যুদের চরদখলে রক্তচক্ষুর মধ্যে এখনো কোনোমতে বেঁচে আছে। কথিত আছে, সব নদীর মা হচ্ছে এই ভৈরব নদ। আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে এই নদ থেকে প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পালতোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, মালবাহী ট্রলার চলাচল করত। খুলনা থেকে বাগেরহাটে যেতে এ নৌপথের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার, পরিবহন খরচ স্থলপথ থেকে অনেক কম। আগে এ পথে একটি নৌকা বা মালবাহী ট্রলার খুলনা থেকে বাগেরহাটে পৌঁছাতে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগত। বর্তমানে বিকল্প পথ ট্রাক, পিকআপ, নছিমন, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে নৌকা চলাচলে একদম অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ অপ্রশস্ততা ও অগভীরতা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী লোক নদী দখল করে বিভিন্ন স্থানে ধান, সরিষাসহ নানান শাকসবজি চাষ করছে। একসময় এ অঞ্চলের শত শত জেলে এখান থেকে জীবিকা নির্বাহ করত। কালক্রমে তারা অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। বেশকিছু জেলে জানান, বর্তমানে এই নদে কোনো মাছ পাওয়া যায় না। ১৯৯০ সালের আগে একবার নদটি খনন করা হয়েছিল। এরপর শুধু ফকিরহাটে ১৯৯৯ সালে স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে নদটি খনন করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খনন কাজ হলেও কিছুদিনের মধ্যে আগের মতো সেখানে পলি পড়ে ভরাট হয়ে নৌচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদের দু’পাশে ইটের ভাঁটা, মাছের ঘের, বসতবাড়ি, দোকানঘর, খোলা পায়খানা নির্মাণ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নদটিকে ঠেলে দিচ্ছে দখলকারীরা। ভৈরবের যৌবন ফিরিয়ে আনতে হলে এর দু’ধারে গড়ে ওঠা অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা একান্ত প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন নদটি খনন করে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি করা ও নৌচলাচলের ব্যবস্থা করা। তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। অপরদিকে বন্যা বা ভারীবর্ষণ হলে ভৈরবের দু’কূল ছাপিয়ে প্রায় ৪-৫ হাজার হেক্টর জমির গলদা-বাগদা চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। বর্ষা মৌসুমের আগে ভৈরব নদটি খনন করা না হলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আরো বেশি পানিতে প্লাবিত হবে এই অঞ্চল। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ অঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি- অবিলম্বে নদটি খননের ব্যবস্থা করা হোক।





