ক্রেডিট কার্ডে বাড়ছে ঋণ

ক্রেডিট কার্ড

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ক্রেডিট কার্ডে বাড়ছে ঋণ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে এর ব্যবহার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এক বছরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ বেড়েছে ২৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৬ সালে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন ৪৪০ কোটি টাকা। সেটি ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭০ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি ও জামানত ছাড়া ঋণ সুবিধার কারণে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের চাহিদা বাড়ছে। ব্যাংকগুলো অন্য ঋণের থেকে ক্রেডিট কার্ডে বেশি সুদ পাওয়ায় এ ব্যবসায় ঝুঁকছে। ছোট ছোট ঋণে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড অফার করছে।

উচ্চ সুদহার ও নামে-বেনামে গোপন চার্জ আরোপ করে ব্যাংকও ভালো আয় করে এই খাত থেকে। কোনো কোনো ব্যাংক ব্যয়বহুল এই কার্ডে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশেরও বেশি সুদ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ৩০ শতাংশের বেশি হবে না বললেও কার্যত বেশিরভাগ ব্যাংকই তা মানছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক, জামানত ছাড়া ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারে। এ ছাড়া সহজে নগদায়ন করা যায় এমন ‘তরল জামানত’ থাকলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে গ্রাহককে দিতে পারে ব্যাংকগুলো।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ক্রেডিট কার্ডে সুদ বেশি হলেও জামানত ছাড়া ঋণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া যারা নগদ টাকা বহন করতে চান না, তারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। ব্যাংকগুলো জামানত ছাড়া ঋণ দেয়, তাই এ খাতে ঝুঁকিও বেশি। এ কারণে ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত সুদ নেয় ব্যাংকগুলো। এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের হিডেন চার্জও নেওয়া হয়। যদিও এটা ঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, সামগ্রিক ব্যাংক খাতের ঋণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি সরকারের অদৃশ্য চাপ রয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের চাপ থেকে ব্যাংকগুলোর মালিকরা সেই ঘোষণা দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোতে ক্রেডিট কার্ডের দিকে আরো বেশি ঝুঁকবে ব্যাংকগুলো। কারণ এখান থেকে বেশি সুদ আদায় করতে পারবে।

উৎপাদনশীল খাতে এক অঙ্কে সুদ নামলেও ক্রেডিট কার্ডে ঘোষণা দিয়ে উচ্চ সুদ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিপরীতে ২৭ থেকে ২৮ ধরনের ফি (মাশুল) নিচ্ছে। ব্যাংকভেদে ফির নাম ভিন্ন হলেও চার্জ কাটা হয় প্রায় একই হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

জানা গেছে, অনেকে নগদ টাকার বদলে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পণ্য কেনেন। যদিও ব্যাংকের কাছে এই ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে একটি পণ্য। অন্যান্য ঋণে সুদের হার বার্ষিক হারে আরোপিত হলেও ক্রেডিট কার্ডে সুদ দিতে হয় মাসিক ভিত্তিতে। দেখা গেছে, ক্রেডিট কার্ডের বেশিরভাগই ভোক্তাই সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী। ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩১টি ব্যাংক গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত সুদ আদায় করায় সম্প্রতি ১৮টি ব্যাংকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে তাদের সুদ হার ৩০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্য বলছে, ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বাড়লেও গাড়ির ঋণ কমে গেছে। শুধু তাই নয়, গাড়ির ঋণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছরের শেষে গাড়ির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৯৩০ কোটি টাকায়, যা ২০১৬ সালে ছিল দুই হাজার ৩০ কোটি টাকা। আবার গাড়ির ঋণ কমলেও বেড়েছে ভোক্তা খাতে বাড়ি বা আবাসন ঋণ। ২০১৭ সালের শেষে আবাসন খাতের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এ খাতে ঋণ ছিল ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

২০১৭ সালে তৈরি পোশাক খাতে ঋণ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে খেলাপি ঋণও। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পোশাক খাতের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৭৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের শেষে পোশাক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাক। যা ২০১৭ সালের শেষে বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে বস্ত্র তথা টেক্সটাইল খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৫৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। গত বছরের শেষে বস্ত্র খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads