ক্যানসার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর। জেনে রাখা প্রয়োজন কী কী শারীরিক পরিবর্তন দেখা গেলে আপনি কিংবা আপনার পরিবারের সদস্যরা কি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন?
যদি আপনার পরিবারের কোনো সদস্য কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার কিংবা অন্য কোনো ক্যানসারে আক্রান্ত থাকেন তবে আপনি কিংবা আপনার পরিবারের অন্য সদস্যরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। যদিওবা এর সম্ভাবনা অনেক কম। তবু শিগগির একজন জেনেটিক কাউন্সিলর কিংবা মেডিকেল অনকোলজিস্টের শরণাপন্ন হবেন।
আমাদের দেশে ক্যানসার কি আগে থেকেই শনাক্ত করা সম্ভব?
জরায়ুমুখের ক্যানসার কিংবা স্তন ক্যানসারের জন্য আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। অন্যান্য ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি একজন মেডিকেল অনকোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে পারেন। যিনি আপনাকে করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
আপনাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
- শরীরের কোনো স্থান হঠাৎ ফুলে গেলে কিংবা চাকা অথবা পিণ্ড আকার ধারণ করলে।
- শরীরের কোনো স্থানে ঘা, যা কি না দীর্ঘমেয়াদি এবং চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না।
-অনেক দিন ধরে ক্ষুধামন্দা, খাওয়ায় অরুচি কিংবা অল্পতে পেট ভরে যাওয়া।
- ঘন ঘন বমি কিংবা বমির সঙ্গে রক্ত গেলে।
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে।
- অস্বাভাবিক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া কিংবা গায়ের রঙ সাদা হয়ে যাওয়া।
- দীর্ঘমেয়াদি অথবা ঘন ঘন জ্বর যা কি না স্বাভাবিক চিকিৎসায় নিরাময় হচ্ছে না।
- হঠাৎ শারীরিক ওজন অস্বাভাবিক কমে গেলে।
- পায়খানা কিংবা প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
- পায়খানা কিংবা প্রস্রাবের গতি-প্রকৃতি অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হলে।
- দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, যা কি না আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মকে ব্যাহত করে।
- মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পরও ঋতুস্রাব বা মাসিক হওয়া।
- শরীরে আগে থেকে থাকা কোনো চাকা কিংবা পিণ্ডের হঠাৎ আকার, আকৃতি কিংবা রঙ পরিবর্তন হওয়া।
ক্যানসার সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
- ক্যানসার একটি অভিশাপ।
- এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ।
- ক্যানসারের চিকিৎসা সাধ্যের বাইরে।
- আমাদের দেশে ক্যানসার চিকিৎসাযোগ্য নয়।
- থেরাপি দিলে রোগী আর বাঁচে না।
- অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার চেয়ে অলটারনেটিভ চিকিৎসা (হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি) বেশি কার্যকর।
ক্যানসার প্রতিরোধে আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
- স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা।
- শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ধূমপান, তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদি পরিহার করা।
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত কিংবা ফাস্টফুড খাবার পরিহার করা।
- প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি খাওয়া।
- উপরের লক্ষণসমূহের কোনো একটি দেখা দিলে অতিসত্বর কমপক্ষে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, প্রাণ মেডিকেল অফিসার
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা