কোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন চাষীদের

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’

কোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন চাষীদের

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’সামনে রখে চকরিয়া থেকে গোলাপ যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এ দিবসটিকে সামনে রেখে দেশের প্রাণ কেন্দ্র ঢাকা, বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফুল ব্যবসায়ীরা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতরী ‘গোলাপ নগর’ খ্যাত থেকে আগেভাগেই নানা প্রজাতির রকমারি ফুল সংগ্রহ করছেন। অনেক ব্যাবসায়ীরা ফুল চাষীদের কাছে আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছেন যাতে ফুল সংকটে পড়তে না হয় । এ বছর ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। সব মিলিয়ে গোলাপ নগরের ফুলচাষীরদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে । এবার চাষীরা কোটি টাকার ফুল বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছেন।

এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকায় বেশ খুশিমনে ফুল চাষে নামেন চাষিরা। এতে চলতি বছর পুরোদমে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে ‘ গোলাপ নগর ’ বরইতলী ইউনিয়নে।

চকরিয়ার বরইতলী থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে ফুল বিক্রি করেন আড়তদার অনেক ব্যাবসায়ী । বরইতলী থেকে তারা প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ হাজার ফুল কেনেন । বিশেষ দিবসে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে কেনেন তারা। এবারের ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগাম অর্ডার দেওয়া হয়েছে ৮০ হাজার গোলাপ ও গ্লাউডিওলাস ফুলের।

বরইতলী একতা বাজার এলাকার ফুলচাষি রেজাউল করিম মেম্বার বলেন, আমি একসময় তামাকের চাষ করতাম। তখন মুনাফাও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি ও দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে শরীরের অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছিল না। তাই অন্যের দেখাদেখিতে তামাকচাষ ছেড়ে গত তিন বছর ধরে উদ্যোগী হই ফুল চাষে এবারও দুই কানি জমিতে গোলাপ ও গ্রাউডিওলাস ফুলচাষ করেছি। ফলনও ভালো হওয়ায় বেশ খুশি লাগছে।

রেজাউল আরো বলেন, প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকাররা সরাসরি বাগানে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক পাইকার আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে। এতে এবার কম করে হলেও তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

চাষিরা জানান, ফুলের বাজারে বরইতলীর বাগান গুলোর ফুল বর্তমানে অনেক চাগিদা রয়েছে । প্রতিটি গোলাপের দাম প্রকার ও মানভেদে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাচঁ টাকায়। আর নানা রংয়ের গ্লাউডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এতে চাষির পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা ও ফুল তোলায় নিয়োজিত চার শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটেছে নিয়মিত পারিশ্রমিক ও কাজ পাওয়ায়।

ফুল বাগানশ্রমিক বরইতলী পূর্ব পাড়ার রহিমা বেগম, আমেনা খাতুন বলেন, দেশে ফুলের চাহিদা ভালো থাকায় ফুল বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রতিদিন টাকা আয় করছি। এতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালভাবে অভাব-অনটন ছাড়াই সুখে আছি । বলতে গেলে এখন আর কোন অভাব নেই

সরেজমিন ফুলচাষি ও শ্রমিকদের সথে আলাপ করে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের গোলাপ নগর খ্যাত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের শতাধিক বাগান থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল সরবরাহ করা হয় পাইকারী আড়তদারদের কাছে। বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোতে এসব বাগানের ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত আড়াই দশক ধরে এখানকার চাষিরা রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ফুলচাষ করে আসছেন। প্রথমদিকে অল্প জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হলেও বর্তমানে বরইতলী ইউনিয়নে ১১০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে ফুলের।

বরইতলী ফুলবাগান মালিক সমিতির সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফুল চাষের অনুকুলে থাকায় পুরোদমে ফুলচাষে নেমেছেন শত শত চাষি। তাই আশা করছি, এবারের ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে গোলাপ, গ্লাউডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিক্রি হবে কোটি টাকার কাছাকাছি। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকারি ক্রেতারা বাগানে এসে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন চাষিদের। আগামী তিনদিনে সবকটি বাগানের সিংহভাগ ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি ।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, বরইতলী ইউনিয়নে চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাউডিওলাস ও আরও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাচঁ শতাদিক চাষি। এবারের ভালোবাসা দিবসসহ সবকটি দিবসে ফুল বিক্রিও ভালো হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষিরা।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সিকদার বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের জমিতে সর্বনাশা তামাক চাষ করতেন। তামাক চাষের কারণে যেভাবে পরিবেশ ও শারীরিক ক্ষতি হয় তা আমি তাঁদের বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে সক্ষম হই। তাই তাঁরা কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ ছেড়ে ফুলচাষের দিকে আগ্রহ বাড়িয়েছে। গত তিন বছর ধরে ফুলচাষ করে আমার ইউনিয়নের অনেক মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন যাপন করছেন। তাদের ছেলে মেযেরাও স্কুল-কলেজে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছেন । এবছর প্রকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় চাষিদের বাগান গুলোতে ফলন বেশ ভাল হয়েছে । বাগান গুলোতে ফুল বিক্রিও বেড়েছে অনেকগুণ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads