কৃষকদের অবস্থা বিবেচনা করুন

পেঁয়াজের বীজ

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

পেঁয়াজ বীজের অগ্নিমূল্য

কৃষকদের অবস্থা বিবেচনা করুন

  • প্রকাশিত ৬ নভেম্বর, ২০১৮

এ কথা সত্য যে, বাংলার কৃষক আজ দুর্দশাগ্রস্ত। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করে মেলে না উৎপাদন খরচটুকুও। পাইকার আর কৃষকদের মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীর আবির্ভাবে কৃষকের অবস্থান এখন খাদের কিনারে। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারদর দিনে দিনে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তেমনি বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। বর্তমান এই মৌসুম অর্থাৎ বাংলা কার্তিক মাস পেঁয়াজের বীজ বপনের সময়। অথচ ঝিনাইদহের চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পেঁয়াজ বীজের উচ্চমূল্যের কারণে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ বীজের মূল্য দ্বিগুণ। চাষিরা জানাচ্ছেন, কেজিপ্রতি তিন হাজার টাকার বীজ এবার ছয় হাজার টাকা; আবার কোথাও গত বছরের ১ হাজার ৮০০ টাকার এক কেজি বীজ এবার কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকার বিনিময়ে। অন্যদিকে হাইব্রিড এক কেজি পেঁয়াজের বীজ কিনতে কৃষককে দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। পেঁয়াজ বীজের এই অগ্নিমূল্যে এখনই অন্ধকার দেখছেন চাষিরা। ফলে এবার পেঁয়াজের আবাদ কমিয়ে দেবেন, এমনি আভাস দিয়েছেন ঝিনাইদহের পেঁয়াজ চাষিরা। এক ঝিনাইদহের চিত্র বলে দিচ্ছে সারা দেশের পেঁয়াজ চাষের অবস্থা কেমন হতে পারে! ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কেবল ঝিনাইদহ জেলায় ৭ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে ৮৬ হাজার ৭৫ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বীজের উচ্চমূল্যের কারণে যদি কৃষকরা আবাদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, তবে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম হবে। আবার বেশি দরে বীজ কেনায় বাজারে এর প্রভাবও পড়বে, ফলে খোলাবাজারে পেঁয়াজের দামও বেশি থাকবে। সুতরাং পেঁয়াজের ঝাঁজে সাধারণ মানুষকেও কাঁদতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে এক কেজি বীজ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যেন সর্বত্র সঠিকভাবে মানা হয় সে বিষয়টিতেও নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উপরন্তু প্রয়োজনে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করার বিষয়টিও ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছি। কেননা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানিকৃত উন্নতমানের পেঁয়াজ বীজ এতদিন ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করত। এ বছর থেকে তারা তা বন্ধ করে দিয়েছে।

সুতরাং এ কাজটি এখন আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকেই করতে হবে। নতুবা আগামীতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতির কথাই জোরেশোরে উচ্চারিত হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজ বীজের দাম দ্বিগুণ হওয়ার কোনো কারণ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখাও আবশ্যক। এক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং সেল বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করছি।

এ কথা সত্য, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে আমাদের দেশে একটি পণ্যের উচ্চমূল্যের পেছনে যত কারণ রয়েছে, তার মধ্যে একটি অন্যতম কারণ বাজার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সিন্ডিকেট। সুতরাং সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে যদি পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads