কাল থেকে পদ্মা-মেঘনায় সকল মাছ ধরা বন্ধ

পদ্মায় মাছ ধরছে জেলেরা

ছবি : মহিউদ্দিন আল আজাদ

জাতীয়

কাল থেকে পদ্মা-মেঘনায় সকল মাছ ধরা বন্ধ

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ
  • প্রকাশিত ৬ অক্টোবর, ২০১৮

জাতীয় সম্পাদ ইলিশ প্রজনন রক্ষায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। রোববার (৭ অক্টোবর) থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন অভয়ারশ্রম এলাকায় মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ, পরিবহন ও সরবরাহ করা যাবে না। ২০১৭ সালে ১ অক্টেবর থেকে ২২ দিন এসব এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। চলতি বছর প্রজনন মৌসুম আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর করা হয়েছে।

এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত চাঁদপুর জেলা ট্রাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। অভয়াশ্রম চলাকালে এসব নদীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নদীতে ২৪ ঘন্টা কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের টিমের অভিযান চলবে। এ ছাড়াও অভিযানে এসব এলাকায় মাছ আহরণ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়, জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত ইলিশ জেলে রয়েছে। এসব জেলেরা এ ২২ দিন যাতে করে নদীতে মাছ আহরণ না করেন, সে জন্য তাদেরকে ইতোমধ্যে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে সচেতন করা হয়েছে। মৎস্য আড়ৎ এলাকায় জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।

সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে ফজলুর রহমান ও মানিক প্রধানিয়া জানান, তারা বছরের সব সময়ই নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন তারা মাছ আহরণ করবেন না। কিন্তু তাদেরকে ২২ দিনের জন্য যে ২০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

জেলা মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক দেওয়ান জানান, আমরা জেলেদেরকে অভয়াশ্রমকালীন সময়ে ইলিশ আহরণ না করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে একাধিক সভা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে তাদের মাছ ধরার নৌকাগুলো যেন ২২ দিন খাল ও পুকুরে উঠিয়ে রাখেন। কারণ ইলিশ এ সময়ে মিঠা পানিতে নিরাপদ স্থান হিসেবে ডিম ছাড়তে আসে। একটি ইলিশ কমপক্ষে ২২ লাখ ডিম ছাড়ে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, গত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কয়েকটি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের ১শ’ কিলোমিটার এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, জাতীয় সম্পাদ ইলিশ রক্ষা এবং নিরাপদে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য জেলা ট্রাস্কফোর্স সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আর এ ২২ দিন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টাগার্ড, জেলা মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ২৪ ঘন্টা রুটিন অনুযায়ী নদীতে দায়িত্ব পালন করবে। অভয়াশ্রম এলাকার সকল জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলেদেরকে নিয়ে একাধিক সভা হয়েছে। জেলা মৎস্য বিভাগ ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য জেলে পাড়াগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, সরকার জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সফল অভিযান পরিচালনা করায় মানুষ আবার ইলিশ উৎপাদনের সুফল পেতে শুরু করেছে। কাজেই এবারের নিষেধাজ্ঞার সময় সবাইকে মা ইলিশ রক্ষার আন্দোলনে নামতে হবে। তিনি বলেন, কোন নৌকা নদীতে নামতে দেয়া হবেনা। এজন্য নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ বাহিনী, আমাদের সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এ্যাসিল্যান্ডদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন জিরো টলারেন্স দেখাবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।

বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনিস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষক ডা. মাসুদ হোসেন খাঁন জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে এ অভিযানের ফলে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১ কেজি ডিম উৎপাদন হয়। ফলে ৩৯ হাজার ২৬৮ কেজি জাটকা যুক্ত হয়, সর্বোপরি জেলেরা ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করে। তিনি বলেন, এ বছর (১৭-১৮ অর্থ বছরে) ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়াবে। তিনি বলেন, শুধু ইলিশই নয়, নদীর অন্যান যেসব মাছ রয়েছে সেসব মাছ নদীর মোহনায় ডিম ছাড়বে এতে ইলিশের পাশা-পাশি নদীর অন্যান্য প্রজাতির মাছও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এ সব নদীতে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এ বছর এ সময় আরো ৬দিন বাড়িয়ে ৬ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর কারণ হলো এ ২২ দিনের মধ্যে একটি অমবশ্যা ও একটি পূর্ণিমা রয়েছে। সাধারণত যেকোন প্রজাতির মাছ অমবশ্যা ও পূর্ণিমায় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মিষ্টি পানিতে নদীর মোহনায় চলে আসে। তাই সময়টা ১ অক্টেবরের পরিবর্তে ৬ অক্টোবর রাত ১২ থেকে সকল মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসময়টা চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ইলিশ গবেষক) ড. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নোয়াখালির হাতিয়া, ভোলা, চাঁদপুর নদীর মোহনায় ইলিশ মাছের ডিম ছাড়ার প্রকৃতির উপর গবেষণা করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads