কাল থেকে ইলিশ ধরতে নামবে জেলেরা

নৌকা ও জাল প্রস্তুত করেছে জেলেরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কাল থেকে ইলিশ ধরতে নামবে জেলেরা

  • মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

২২ দিন  নিষেধাজ্ঞা শেষে রবিবার ২৮ অক্টোবর থেকে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নদীতে নামবে জেলেরা। শনিবার মধ্য রাত থেকে মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে । দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর আজ থেকে নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামবে প্রায় ৫১ হাজার ১’শ ৯০ জন জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধ পাবে।

মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সরকার গত ২২ দিন চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষীপুরসহ দেশের ৫টি স্থানকে ইলিশের অভায়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষনা করে সরকার। এ সময় নদীতে যে কোন ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিলো। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।

জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত যার ৬০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৪১ হাজার ১শ ৮৯জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে বাধাহীন নদীতে মাছ ধরতে পারবে তাই জেলেদের মনে কর্মদ্দীপনা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে।

শনিবার ২৮ অক্টোবর দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, হরিনা, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেদের নৌকা মেরামত কাজ শেষ করে নদীতে নৌকা নামিয়েছে।  আজ মধ্য রাত থেকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃত জেলেদের ধারনা খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে হয় না। তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, চাঁদপুরে কিছু জেলে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও রাতের অন্ধকারে মেঘনার চরাঞ্চলে মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছিল দেদারছে। সেখানে টাস্কফোর্স পৌঁছা সম্ভব নয়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকায় জেলে পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় জেলেরা এখন তাদের নৌকা ও জাল প্রস্তুত করেছে। ইলিশ ধরার জন্য নৌকা ও চান্দি জাল নিয়ে প্রস্তুত ওই জেলে পাড়ার মোস্তফা বেপারী। তিনি জানান, গত ১০দিন পূর্বে পদ্মা-মেঘনার পানি ছিলো পরিস্কার। কিন্তু এখন গোলা। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে আমরা ভোলা জেলার দৌলত খাঁ এলাকায় বেশীর ভাগ সময়ে ইলিশ ধরতে যাই।

যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলো প্রশাসন। অন্যান্য বছর আটককৃতরা অধিকাংশই ছিল অন্য জেলার। এ বছর আটককৃতদের বেশীর ভাগই চাঁদপুর জেলার।

আগামী বছর ইলিশ উৎপাদনের উপর নির্ভর করবে কর্মসূচির সফলতা। যদিও এ কর্মসূচি সফল করায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মো. আসাদুল বাকী। তিনি আরো জানান, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নীচের সাইজের ইলিশ ধরা নিষেধ।

প্রবীণ জেলে ইমান হোসেন বেপারী জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাভ্যতা সংকটের কারণে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরেও ২২ দিন বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।

সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাউল দিলেও জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমানে মা ইলিশ নিধন করেছে। অনেক স্থানে টাস্কা ফোর্স ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। যার ফলে এ বছর মা ইলিশ নিধনের কারনে ইলিশের আকাল দেখা দিতে পারে।

২২ দিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড, টাস্কফোর্স এবং মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে এবং মা ইলিশ রক্ষায় ১২৮ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে, ১১৩জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ১৫.৬১১ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ১২ মেট্রিক টন জাটকা আটক করে গরিব-দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads