কামান্না গণহত্যার করুণগাথা

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

কামান্না গণহত্যার করুণগাথা

  • বঙ্গ রাখাল
  • প্রকাশিত ১২ মে, ২০২১

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কামান্না গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী ভোর না হতেই মাধম ভৌমিকের বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং নির্বিচারে হত্যা চালায়। তারা ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন নিরীহ মানুষ এবং তিনজন রাজাকারকে হত্যা করে। মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের নানা কাহিনী হিসেবে কামান্না ট্র্যাজেডির কথা অনেকে জানলেও এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই বললেই চলে। আবার কিছু বইপত্রে কামান্না ট্র্যাজেডি নিয়ে সামান্য জানা থাকলেও রয়েছে তা নানা ভুল তথ্যে ভরপুর। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, একেকজন একেকটা তথ্য জানে। আবার তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে একই তথ্য একাধিক জনের কাছ থেকে যাচাই করে নিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রেও জনে জনে তথ্যের বিকৃতি ঘটতে দেখা গেছে। লোকমুখে শুনে মনে হয় আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। কিন্তু বাঙালির এই বীরত্বের ইতিহাস আমরা যতটুকু অনুভব করতে পারি সে তুলনায় অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্মমতা, লাঞ্ছনার ইতিহাসের প্রকৃত চিত্র ততোটা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারি না। কারণ আমাদের সামনে সেই ভয়াল দিনের ভয়াবহতার চিত্র সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। বরং সঠিক চিত্র বার বার গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। জানানো হয়নি নতুন প্রজন্মের কাছে এই গৌরবগাথার পেছনের অনেক প্রাণের বিসর্জন আর মা-বোনের ইজ্জত হারানোর করুণ আর্তনাদ।

কামান্না ঝিনাইদহ জেলা শৈলকূপা থানার অন্তর্ভুক্ত বগুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম। হাটফাজিলপুর বাজার ব্রিজের উত্তরে কামান্না গ্রাম। কুমার নদের কোলঘেঁষে গ্রামটির অবস্থান। শৈলকূপা থানা সদর থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে কামান্না গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামের পূর্বদিকে বগুড়া, পশ্চিমে নওপাড়া, বারইহুদা। নদীর ওপারে ফাজিলপুর, আবাইপুর, মিনগ্রাম। আবার এই গ্রামটি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার পশ্চিমের শেষ সীমানায় গ্রামটির অবস্থান। বিজয়ের শেষপ্রান্তে এসে এই কামান্নাতে ঘটে এক হূদয়বিদারক ঘটনা, যা কোনোদিন বাঙালি ভুলতে পারবে না। ঘটনাটা ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার। সকালটা কুয়াশাচ্ছন্ন। হাড়কাঁপানো শীত। ঘনকুয়াশায় ভরা চারপাশ। কাছের মানুষকেও চোখে দেখা যায় না। কামান্নায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কুণ্ডুপাড়া। এখানে হিন্দুদের বাস। তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই অনেকে নিরাপদ স্থান ভেবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। আবার অনেকে মা মাটি কিংবা নিজের পৈতৃক ভিটাকে বুকে আঁকড়ে পড়ে আছেন। এই কুণ্ডুপাড়াতেই মাধব ভৌমিক নামে একজন অর্থশালী মানুষের বাস ছিল। তিনিও পাড়ি দেন ভারতে। তাই তার ঘরবাড়ি শূন্য পড়ে রয়েছে। এখানেই এসে আশ্রয় নিয়েছে বাঙালির প্রায় ৮০-৯০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। যারা এই মাধব ভৌমিকের বাড়িকেই অস্থায়ী ক্যাম্প এবং নিজেদের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেন। এই বাড়ির মূল আঙ্গিনায় বেশ কয়েকটি টিনের ঘর পাশাপাশি। এখানেই তারা অবস্থান করেন। কে জানে এই বীরদের রক্তেই ভাসবে মাধবে বাড়ির আঙ্গিনা। ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বরের সেই স্মৃতি আজও শরীরে মেখে দাঁড়িয়ে আছে এই ঘরগুলো। তার শরীরে শত শত গুলির চিহ্ন। অনেকের ভাষ্যমতে জানা যায়, এই কামান্না মাধ্যমিক স্কুলে কয়েক মাস আগে মিলিটারিরা ক্যাম্প করেছিল এবং মানুষের বাড়ি থেকে গরু-ছাগল ধরে এনে তারা রান্না করে খেতেন। তাদের সঙ্গী ছিল রাজাকার আলবদর বাহিনী। কয়েকদিন পরে তারা আবার এখান থেকে চলেও যায়। এক সাক্ষাৎকারে আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, সেদিন চারদিক থেকেই এই বাড়ি মিলিটারিরা ঘিরে ফেলে। ঝিনাইদহ হয়ে যুগনি-বাগনী দিয়ে উঠেছে। আবার ঝিনাইদহ হয়ে সাবাসপুর দিয়ে নিত্যানন্দপুর হয়ে এবং মাগুরা থেকে শ্রীপুর হয়ে নদীর পাড় দিয়ে এই পথে ঢুকে তারা চারদিক থেকেই অ্যাটাক করেছে। এই মাধব ভৌমিকের টিনের ঘরে আশ্রয় নেওয়া মুক্তিবাহিনীর কথা রাজাকার মারফত মিলিটারিদের কানে যায় এবং তারা  আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই টিনের ঘরে ঘুমন্ত বীরদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আগে থেকেই বাড়ির চারদিক মিলিটারি বাহিনী ঘিরে ফেলে। এই বাড়িতে থাকা সবচেয়ে ছোট যোদ্ধা আবুল বাশার বাঁশি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বের হয়। টিউবওয়েল থেকে গাড়ুতে (হিন্দুদের ব্যবহূত বদনা) পানি নিয়ে প্রকৃতির কাজ করতে যেতে দেখেন ঘরের কোণে কদবেল পড়ে আছে। সেই কদবেলের লোভ সামলাতে না পেরে তিনি কদবেল নিতে গেলে তিনিই সর্বপ্রথম মিলিটারিদের আগমন টের পান। এমন অবস্থায় বাঁশি কী করবেন বুঝতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতে মিলিটারি বাহিনী তার কাছে চলে আসে এবং তাকে গ্রামের একজন নিছক কিশোর ভেবে তার গায়ে হাত দিয়ে— ‘ওদারসে যাও’ বলে। কিশোর বাঁশি খবরটি দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনের নাম ধরে সর্বপ্রথম ডাকতে থাকেন। আলী হোসেন ভাই, ওঠেন মিলিটারি আসছে। বাঁশির কথা মুক্তিযোদ্ধারা শোনার আগেই তারা ঘরে ঘুমিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি ছুঁড়তে থাকে। কিছু বোঝার আগেই ঝরে যায় ২৭ বীরের জীবন। আহত হয় অনেকে। গোলাস রসুল সহযোদ্ধা গোলজারের রক্ত গায়ে মেখে বেঁচে যায় এবং গোলজার একজন বীর সে মিলিটারিদের হাতে মরবে না বলে নিজের গুলি দিয়ে নিজেকে গুলি করে শহীদ হন। অধীর নদী সাঁতরে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যে কারণে তার লাশ নদীর কূলে পড়ে ছিল।

এই বাড়িতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তে ভেসে যায় মাধব ভৌমিকের ভিটে। মিলিটারিরা সেদিন বাংলার অকুতোভয় বীরদের পাখির মতো গুলি করে মেরেছিল। তাদের এই আক্রমণে শহীদ হয় ২৭ জন বীর যোদ্ধা, ২ জন সাধারণ মানুষ এবং ৩ জন রাজাকার। শহীদদের কামান্না স্কুল মাঠের পাশেই ৪-৫টি গণ কবরে শায়িতকরা হয়। পাশের বাড়ির নভের আলী মাঝি ও আব্দুস সালাম খান ঘরের ছাদে লুকিয়ে থাকা মুক্তিদের নামিয়ে এনে তাদের সেবার ব্যবস্থা করেন। পরে আজিজ মাতব্বর, ফজলু খাঁ এবং ইসহাক মোল্লার নির্দেশেই গণকবর খুঁড়ে তাদের মাটি দেওয়া হয়। রঙ্গবিবিকে তার সন্তানরা নিয়ে তাদের বাড়িতে কবর দেন এবং ফণীভূষণ কুণ্ডুকে তাদের শ্মশানের কাছে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এই যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২৭ বীরের জীবন কেড়ে নিল মিলিটারি বাহিনী— তাদের আক্রমণ বুঝতেও পারেনি তারা। তারা যে নিজেরাও আক্রমণ করবে সে সুযোগ ও তারা পাইনি। কিছু মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাঁচাতেও সক্ষম হয়েছে। তবে তারা আজও শরীরে বহন করছে সেই দুঃখ দিনের ক্ষত। এই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে ভেসে যাওয়ার কথা দ্রুত ছড়িয়ে গেল চারদিকে। চারদিক থেকে লোকজন ভরে যেতে থাকে কামান্নার স্কুল মাঠ। কিন্তু বারবার ছড়ানো হচ্ছে এই যে মিলিটারি এসে গেল। তবু মানুষ নিজের আপনজনের লাশটি খুঁজে বের করতে পারল না। এখানে যারা মারা গেছেন তারা অধিকাংশই মাগুরার শ্রীপুর থানার হাজীপুর গ্রামের লোক। তাদের মধ্যে সেদিন রাতে এই মুক্তিবাহিনী তিনজন রাজাকারকে ধরে এনে আটকে রেখেছিল। মিলিটারিরা এই যোদ্ধাদের সাথে তাদেরও হত্যা করে। মারা যাওয়া বীরদের মধ্যে একমাত্র গুরুতর আহত হয় দাইরপোলের রাজা মিয়া। চিকিৎসা করানো হলেও সে পরেরদিন বাবার হাতের ওপর  মারা যান। তাকে তার বাড়িতেই পুকুরের পাড়ে কবর দেওয়া হয়। এখানে যে তিনজন রাজাকার মৃত্যুবরণ করে তারা হলেন— হাবিবুর রহমান মোল্লা (হাজীপুর), পিতা : গোলাম ছফদার মোল্লা। শেখ আমিনুদ্দিন (হাজীপুর), পিতা : শেখ কফিল উদ্দিন এবং খাতের আলী শেখ (হাজীপুর), পিতা : নজর আলী শেখ। এদের মধ্যে আমিনুদ্দিন ও খাতের আলীকে কামান্না এবং হাবিবুর রহমান মোল্লাকে হাজীপুর গ্রামে এনে কবর দেওয়া হয়।

দৈনিক জনকণ্ঠের (১৭.৩.২০০১) এক ধারাবাহিক ‘সেই রাজাকার’ এম সাইফুল মাবুদ লেখেন স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার মজনু, রাজ্জাক মোল্লা ও আমজাদ মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থার কথা জানতে পেরে খবরটি সেনাঘাঁটিতে পৌঁছে দেন। আবার কামান্না গ্রামের রহিম মাস্টারের ভাষ্যমতে জানা যায়— নওপাড়া গ্রামের আব্দুল ছাত্তার সরাসরি আমার বাড়িটি দেখিয়ে দেয়। কারণ আমার বাড়িতেই আরিফ মুন্সি আশ্রয় নিয়েছিল। এই আব্দুল ছাত্তারের ভাই সবুর ছিল ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজাকার। আবার অনেকে শৈলকূপার কোদালিয়া, নওপাড়া, চতুরিয়া, সাতগাছি, বিজুলিয়া, যুগনি, কামান্না কিংবা মাগুরার হাজীপুর, ইছাখাদা আলমখালীর রাজাকাররাও এই হূদয়বিদারক ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন বলে মনে করেন। এই মিলিটারিদের নৃশংস হামলায় ২৭ বীর যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।

এদিন কামান্না গ্রামের আরো দুজন শহীদ হন। নিত্যানন্দ কুণ্ডর ছেলে ফণিভূষণ কুণ্ড প্রকৃতির কাজে সাড়া দিতে গেলে মিলিটারিদের গুলিতে মারা যায়। নৌকার গুলিয়ের মধ্যে লুকিয়েও রক্ষা পাইনি। একদিন পরে তার লাশ উদ্ধার করে সবাই। ভোরে নদীতে চাল ধুতে গিয়ে মিলিটারিদের গুলিতে শহীদ হন রঙ্গবিবি (স্বামী : মোজাহার বিশ্বাস) এবং গুলিবিদ্ধ হয় তার কোলে থাকা ছোটমেয়ে মোছা. বুলু বেগম, যে আজও তার শরীরে সেই ক্ষত বহন করে বেড়াচ্ছেন। মাধব ভৌমিকের পাশের বাড়ির ছামেনা বিবির বাড়িতেও সেদিন ৫-৭ জন মুক্তিযোদ্ধা লুকিয়ে ছিল, তারা সৌভাগ্যক্রমে পালিয়ে গিয়েছিল। তিনিও কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। নিজের ঘরের বেড়া কেটে তাদের উদ্ধার করেন।

এই নৃশংসতার শিকার হয়ে বেঁচে ফিরেছিলেন ১৬ জন। এ রাতে এই অস্থায়ী ক্যাম্পে না থাকার কারণে আরো বেঁচে যান—  কমান্ডার মেজর শমসের আলী, নায়েক গোলাম রহমান, নায়েক আবু বক্কার, আব্দুর রশিদ ওরফে ইউনুস মোল্লা, সালামত মোল্লা, সিপাহী বদিউজ্জামান খাজা, মুন্সি মনোয়ার, তোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ ভিকু, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম চমক প্রমুখ। কামান্নার শহীদদের নিয়ে কোনো সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে অন্য জায়গার শহীদদের এখানকার শহীদ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। আবার এই কামান্নাতে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধার নামও বাদ পড়েছে। তাদের মধ্যে আজিজের নাম অন্যতম। তার নাম কামান্নার

স্মৃতিফলকে থাকলেও সে শহীদ হয় মেলেডাঙ্গিতে। সেখানে রাজাকার এবং মিলিটারিরা তাকে পিটিয়ে মারে। অথচ নির্মল কুমার মণ্ডল এখানে শহীদ হলেও তার নাম এখানে নেই। যার নাম রয়েছে হাজীপুর গ্রামের শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত হাজীপুর ইউনিয়নের সামনের স্মৃতিফলকে। আবার যে তিন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জিম্মি থাকার কারণে মিলিটারিদের হাতে মারা যায় তাদের হাজীপুর গ্রামের কিছু মুক্তিযোদ্ধা— মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। এই তিন জনের মধ্যে হাবিবুর রহমান মোল্লা ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী এবং খাতের আরী শেখ ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা অনুমোদিত হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়— ২০০৪ সালে বিজয় দিবসে মাগুরার ভাইনার মোড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে যে বিজয়স্তম্ভ নির্মিত হয় সেখানে থানাওয়ারী শহীদদের নামের তালিকা দেওয়া হলে সেখানে এই তিন রাজাকারের মধ্যে মাগুরা সদর থানায় কামান্নায় নিহত রাজাকার আমিনুদ্দিন ও খাতের শেখের নাম দেওয়া হয়। সেসময় মাগুরা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিবাদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে এই রাজাকারদের নাম বিজয় স্তম্ভ থেকে প্রত্যাহার করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকপ্রদান করা হলে পরবর্তীতে এই বিজয় স্তম্ভ থেকে কালো কালি দিয়ে রাজাকারদ্বয়ের নাম মুছে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী এদেশের সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তারা অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে নির্মূল করার যে পরিকল্পনাগ্রহণ করেছিল তা আজ গণহত্যা নামে সমধিক পরিচিত। পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এদেশের মানুষকে চিরতরে শেষ করার জন্য যে নিচু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিল তা সত্যিই আজ আমাদের বিকৃত মানসিকতাকেই প্রকাশ করে। সেদিন তারা যে শুধু গণহত্যার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখে ছিল তা নয়। মানুষের ঘর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, শিশু হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত ছিল। বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার জন্যই পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী চালিয়েছিল খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো অমানবিক পাশবিকতা। অনেকেই তাদের শরীরে বয়ে চলেছেন তাদের সেই দুঃখদিনের স্মৃতি।আজ এই সব গণহত্যা নির্যাতনের করুণ ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার দিন এসেছে। তাদের সামনে সেইসব ভয়াল দিনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে তবেই না আমাদের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে আর শহীদদের প্রতিও জানানো হবে বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads