জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
কাঠাল নিলাম নিয়ে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের হাসনাবাজ গ্রামে সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনার ছয় দিন পর মালদার মিয়ার পক্ষের দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (১৬ জুলাই)সংঘর্ষে মালদার মিয়া গোষ্ঠির নিহত নুরুল হকের ভাই তফজ্জুল হক বাদী হয়ে মালদার মিয়া গোষ্ঠির ৬৯জনকে আসামি করে শান্তিগঞ্জ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। একেই পক্ষের নিহত বাবুল মিয়ার ভাই ফারুক আহমেদ আরেকটি অভিযোগ দায়ের করছে এতে ৯৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপর দিকে,দ্বীন ইসলাম গোষ্টীর পক্ষ থেকেও থানায় মামলা দেয়া প্রস্তুতি চলছে বলে জানান শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোঃ খালেদ চৌধুরী। এক পক্ষের দুটি মামলায় ১৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কাঁঠাল নিলাম নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলার হাসনাবাজ গ্রামে দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠির আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০) ও আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে,গত ৭ জুলাই উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের
হাসনাবাদ গ্রামে হাসনাবাজ জামে মসজিদে জুমা’র নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি কাঠাল নিলাম করা হয়। নিলামে মালদার মিয়া গোষ্ঠির শেখ ফরিদ ও দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠির আনার উদ্দিনের মধ্যে ডাকাডাকি শুরু হলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা দেখা দেয়। এসময়য় শেখ ফরিদ অধিক দামে কাঠাল ক্রয় করার আক্রোশে দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠির লোকজনদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় এবং মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে চলে যায়। এরপর নিলামের ঘটনার জেরে গত ১০ জুলাই সকাল ১১ টায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাজ গ্রামে দুই গোষ্ঠির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে সংঘর্ষের ঘটনায় দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠির হাসনাবাজ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) ও মালদার মিয়া গোষ্ঠির আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫) মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে আরও জানাযায়,গ্রামের সরাই মরল গোষ্ঠী ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে আধিপত্য ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২০০৬সালের পর থেকে তাদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে । এসব ঘটনায় আদালতে ৭-৮টি মামালা বিচারাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে ঈদের জামাতে সংর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলাও রয়েছে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।
এর মধ্যে গত শুক্রবার(৭ জুলাই) জুম্মাবার হাসনাবাজ গ্রামের মসজিদে এক ব্যাক্তি একটি কাঠাল দান করেন। মসজিদে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এই কাঠালটি নিলামে তোলা হয় এবং দাম হাকাঁনো হয়। এতে গ্রামের সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলামের পক্ষের লোকজন দামের কথা শুনা যাচ্ছে না বলে আওয়াজ তুললে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মালদার গোষ্ঠী সুনু মিয়া ও জুনাব আলী বলে উঠেন মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারী সবাই শুনলেও তোমরা কেন শুনতে পাওনি এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকটি হয়। এ সময় মালদার গোষ্ঠীর শেখ ফরিদ নামে একজন কাঁঠালে লাথি মারলে বিষয়টি নিয়ে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু পক্ষে লোকজন।
এঘটনার জেড় ধরে রবিবার(৯ জুলাই) গ্রামের রাস্তা চলাচলে সরাই মরল গোষ্ঠী জাহাঙ্গীরকে মালদার গোষ্ঠীর লোকজন বাঁধা দিলে বিষয়টি নিয়ে আবারও উত্তেজিত হয়ে যায় দুই পক্ষ। পরে রাতভর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ করতে থাকেন উভয়পক্ষ।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বাছিত সুজনসহ শালিস ব্যক্তিরা সোমবার(১০ জুলাই) সকাল ৯ টার দিকে মধ্যস্থতা করতে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে উভয় পক্ষের আশ্বাসে বিচার সালিশের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এবং তারা কোনো পক্ষই সংর্ঘষে লিপ্ত হবে না হবে জানায়। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলামের লোকজনের সাথে প্রতিপক্ষ মালদার গোষ্ঠীর সুনু মিয়া ও জুনাব আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দু পক্ষে ঘর বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সংর্ঘষে ঘটনাস্থলে সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলাম পক্ষের হাসনাবাজ গ্রামের মৃত ছুফি মিয়ার ছেলে মোঃ বাবুল মিয়া(৫৮),একেই গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল ইসলাম(৪২) ঘটনাস্থলে ও একই গ্রামের মালদার গোষ্ঠী জুনাব আলী পক্ষের আব্দুল বাছিতের ছেলে মোঃ শাহজাহান(৩৬) হাসপাতালে নেয়ার পথে ও সংর্ঘষের দিন গুরুত্ব আহত হয়ে গোপনে চিকিৎসা নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে মালদার গোষ্ঠীর মৃত আজির মোহাম্মদের পুত্র মুখলেছুর রহমান (৬০) নিহত হয় ও উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন।